দক্ষিণ আফ্রিকার একটি উচ্চ আদালত রায়ে ঘোষণা করেছে যে, দেশে তথাকথিত “শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা”র (White Genocide) কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। আদালত এই দাবিকে সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছে। এই রায় এমন একটি সময়ে এসেছে যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষক হত্যা এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্ক চলছে, বিশেষত শ্বেতাঙ্গ চাষিদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনা হচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু দক্ষিণপন্থী সংগঠন এবং বিদেশি ডানপন্থী নেতারা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন যে, দেশটিতে পরিকল্পিতভাবে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের হত্যা করা হচ্ছে। তাদের মতে, এই সহিংসতা শুধুমাত্র সাধারণ অপরাধ নয়, বরং এটি শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিপীড়নের একটি অংশ।
এই দাবিগুলো মূলত ২০১০ সালের পর থেকে আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় হতে থাকে, যখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায় কৃষক হত্যার ঘটনা বাড়তে থাকে। কিছু রিপোর্টে বলা হয়, কৃষকদের বিরুদ্ধে আক্রমণগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অত্যন্ত নৃশংস এবং পরিকল্পিত।
কট্টর দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীগুলো যুক্তি দেয় যে, কৃষকদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে এবং এটি জাতিগতভাবে চালিত একটি হত্যাযজ্ঞ। অনেক বিদেশি ডানপন্থী ব্যক্তিত্ব, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার কিছু রাজনীতিবিদ, এই দাবিকে সমর্থন করেছেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে এক মামলার রায়ে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, “শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা”র দাবির কোনো ভিত্তি নেই। বিচারকরা বলেন,
“দেশটিতে সহিংস অপরাধের ঘটনা রয়েছে, তবে এগুলো জাতিগত নিপীড়ন বা গণহত্যার পর্যায়ে পড়ে না। এই দাবিগুলো মিথ্যা প্রচারণার অংশ, যা সামাজিক অস্থিরতা ও বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে।”
আদালত জানায়, দক্ষিণ আফ্রিকায় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, তবে এর শিকার শুধুমাত্র শ্বেতাঙ্গরা নন, বরং সকল জাতিগোষ্ঠীর মানুষই অপরাধের শিকার হচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সহিংস অপরাধের হার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। প্রতি বছর দেশটিতে হাজার হাজার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতি ১০০,০০০ জনের মধ্যে ৩৬ জন হত্যার শিকার হন, যা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেক বেশি।
কৃষকদের হত্যার হারও অন্যান্য পেশার তুলনায় বেশি, তবে এই হত্যাগুলোর কারণ হিসেবে মূলত ডাকাতি, জমি দখল, ব্যক্তিগত শত্রুতা ও সাধারণ অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। বিচারকরা বলেন,
“কৃষকদের হত্যাকাণ্ড একটি গুরুতর বিষয়, তবে এটিকে নির্দিষ্টভাবে জাতিগত নিপীড়নের উদাহরণ হিসেবে দেখানো ভুল। কৃষকদের পাশাপাশি অনেক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিও একই ধরনের সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।”
বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষি খাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল এবং সরকারকে এই বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এই রায়ের পর বিভিন্ন মহল থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে।
✅ দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে এবং জানিয়েছে যে, “শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা”র প্রচারণা বিভ্রান্তিকর এবং উদ্দেশ্যমূলক। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের অগ্রাধিকার।
✅ বর্ণবাদবিরোধী সংগঠনগুলো বলেছে যে, এই রায় “ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রচেষ্টা”র বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
❌ ডানপন্থী সংগঠনগুলো রায়কে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে দাবি করেছে এবং বলেছে যে, কৃষকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা একটি বাস্তব সমস্যা যা অস্বীকার করা উচিত নয়।
এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলেও প্রতিক্রিয়া এসেছে।
🇦🇺 অস্ট্রেলিয়া: ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার কিছু রাজনীতিবিদ দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের জন্য শরণার্থী সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দেন, যা সে সময় বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল।
🇺🇸 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের জমি দখল এবং সহিংসতার অভিযোগ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে আদালতের এই রায়ের পর যুক্তরাষ্ট্র এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এই রায়ের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকার আদালত “শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা”র দাবিকে ভিত্তিহীন বলে ঘোষণা করলেও, এটি নিশ্চিত যে, এই বিতর্ক এখানেই শেষ হবে না।
✅ সরকারকে কৃষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
✅ সামাজিক বিভাজন কমানোর জন্য সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন।
✅ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত দক্ষিণ আফ্রিকার বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানানো এবং বিভ্রান্তিকর প্রচারণা প্রতিরোধ করা।
বিশ্লেষকদের মতে, আদালতের এই রায় দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক এবং এটি ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ও সামাজিক নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
- যাত্রাবাড়ীতে পূর্ব শত্রুতার জেরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা, অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা পলাতক
- ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার শর্তে খনিজ সম্পদ চায় যুক্তরাষ্ট্র
- উত্তরায় ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুইজনকে গণপিটুনি, ওভারব্রিজে ঝুলিয়ে রাখার চাঞ্চল্যকর ঘটনা
- “ফাইভ আইজ’ থেকে কানাডাকে সরানোর চেষ্টায় হোয়াইট হাউজ: নিরাপত্তা সহযোগিতায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি”
- প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ২০২৭ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা বাজেট ২.৫% এ বৃদ্ধি করার ঘোষণা দিয়েছেন