যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আহ্বান জানিয়েছে, যাতে তিনি প্রমাণ করেন যে তিনি ইউক্রেনের সঙ্গে প্রকৃত অর্থে একটি শান্তিচুক্তি চান। এই আহ্বান আসে মঙ্গলবার পুতিন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে আলোচনার আগে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির “সাহসিকতা”র প্রশংসা করেছেন, যিনি সাম্প্রতিক একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন। ম্যাক্রোঁ সরাসরি রাশিয়াকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, “যথেষ্ট মৃত্যু হয়েছে। যথেষ্ট ধ্বংস হয়েছে। অস্ত্র নীরব হতে হবে।” তিনি পুতিনের প্রতি আহ্বান জানান যে রাশিয়াকেও একইভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি জানাতে হবে এবং যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি আরও কঠোর ভাষায় রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়িয়ে বলেছেন, পুতিনের এখনই “পূর্ণ ও শর্তহীন যুদ্ধবিরতি” মেনে নেওয়া উচিত। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বলেন, “আমি এখন পর্যন্ত পুতিনের কাছ থেকে কোনো আন্তরিক পদক্ষেপ দেখতে পাইনি, যা শান্তিচুক্তির প্রতি তার আগ্রহের প্রমাণ দেয়।” তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্য ও তার মিত্রদের “আরও কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে,” যা প্রয়োজনে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়াতে ব্যবহার করা হবে।
তবে হোয়াইট হাউস এই আলোচনার প্রতি তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ট্রাম্প এই শান্তিচুক্তি সম্পন্ন করতে “প্রতিশ্রুতিবদ্ধ”। তিনি বলেন, “ইউক্রেনে শান্তি এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সম্ভবপর।”
তিনি আরও জানান, আলোচনায় মূলত একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আলোচনা হবে, যা রাশিয়া ও ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। ধারণা করা হচ্ছে, এটি ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিঝিয়া, যা ২০২২ সালের মার্চ থেকে রাশিয়ার দখলে রয়েছে। এই কেন্দ্রটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ রয়েছে, কারণ যুদ্ধের কারণে এটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ইতিপূর্বে যুদ্ধবিরতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন, তবে তিনি শান্তির জন্য বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়েছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো, ইউক্রেনের সেনাদের পূর্বাঞ্চল থেকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার এবং ন্যাটো বাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রে সম্পৃক্ত না করা।
এছাড়া, রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্ক অঞ্চলের বিষয়টি অন্যতম আলোচ্য বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে। গত আগস্টে ইউক্রেন এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিল এবং কিছু এলাকা দখল করেছিল। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়া পাল্টা অভিযান চালিয়ে এলাকাটি পুনর্দখল করেছে বলে দাবি করেছে। পুতিন জানিয়েছেন, রাশিয়া এখন সম্পূর্ণভাবে কুরস্কের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে এবং কোনো বহিরাগত শক্তির হস্তক্ষেপ মেনে নেবে না।
এদিকে, এই শান্তি প্রস্তাব নিয়ে সম্প্রতি সৌদি আরবে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ইউক্রেন ও মার্কিন প্রতিনিধিরা দীর্ঘ আলোচনার পর ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি খসড়া প্রস্তাবে সম্মত হয়। ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা এই প্রস্তাব মেনে নিতে প্রস্তুত, তবে এখনো রাশিয়ার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি আসেনি।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এবং কানাডার নতুন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি মঙ্গলবার এক বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন “অটল” থাকবে এবং রাশিয়াকে অবশ্যই “পরিষ্কার প্রতিশ্রুতি” দিতে হবে।
এখন সকলের দৃষ্টি রয়েছে ট্রাম্প-পুতিন আলোচনার দিকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ইউক্রেন সংকটের সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তবে রাশিয়ার প্রকৃত অভিপ্রায় নিয়ে সংশয় এখনো কাটেনি।