যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসন রোধে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন, যার মূল লক্ষ্য মানব পাচার চক্র ধ্বংস করা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা।
প্রধানমন্ত্রী সার কিয়ের স্টার্মার সম্মেলনে অবৈধ অভিবাসনকে বিশ্বব্যাপী হুমকি হিসেবে তুলে ধরবেন এবং দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ নয়, বরং ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানাবেন।
£৩৩ মিলিয়ন বরাদ্দ পাচার চক্র ভাঙতে
সম্মেলনের আগেই যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে, মানব পাচারকারী চক্র ভেঙে দেওয়ার জন্য এবং অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করতে £৩৩ মিলিয়ন ব্যয় করা হবে।
£৩০ মিলিয়ন ব্যয় করা হবে বর্ডার সিকিউরিটি কমান্ড শক্তিশালী করতে, যা ইউরোপ, বলকান অঞ্চল, এশিয়া ও আফ্রিকাজুড়ে পাচার রুটগুলো চিহ্নিত করবে। £৩ মিলিয়ন বরাদ্দ করা হবে ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসকে আরও কার্যকর করার জন্য, যাতে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
যুক্তরাজ্য অভিবাসন আইন সংশোধন করে গিগ ইকোনমিতে (অনলাইন ভিত্তিক স্বল্প সময়ের কাজ) অবৈধ কর্মসংস্থানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। নতুন নীতিমালায় অবৈধভাবে কর্মরত ব্যক্তিদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে £৬০,০০০ পর্যন্ত জরিমানা এবং মালিকদের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশ ও সংস্থাগুলো
✅ ভিয়েতনাম, আলবেনিয়া ও ইরাকের কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন, যেসব দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি অবৈধ অভিবাসী আসেন।
✅ ফ্রান্স, চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপ ও এশিয়ার অন্যান্য দেশ.
✅ কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকার, ইন্টারপোল এবং মেটা (ফেসবুক), টিকটক ও এক্স (টুইটার) – যারা পাচারকারী চক্রের প্রচারণা বন্ধে কাজ করবে।
✅ এই অপরাধ থেকে বছরে আনুমানিক $১০ বিলিয়ন (প্রায় £৭.৭ বিলিয়ন) আয় করা পাচারকারী নেটওয়ার্ক ধ্বংস করাই সম্মেলনের অন্যতম লক্ষ্য.
২০২৫ সালে রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসীর আগমন
এ বছরের শুরু থেকেই ইংলিশ চ্যানেল হয়ে যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসন বেড়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ৬,০০০-এর বেশি মানুষ ছোট নৌকায় যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে, যা একটি রেকর্ড।
প্রধানমন্ত্রী স্টার্মার বলেন, “আমাদের সীমান্ত রক্ষায় এবং ব্রিটিশ জনসেবার ওপর চাপ কমাতে এই সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা স্থানীয় অর্থনীতিতে হোটেলগুলো ফেরত দিতে চাই, যা বর্তমানে অভিবাসীদের আশ্রয়ের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
মানব পাচার বন্ধে নতুন পরিকল্পনা
🔸 যুক্তরাজ্যের £১ মিলিয়ন অনুদান ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলে পাচারকারী নেটওয়ার্ক ধ্বংসে ব্যয় করা হবে।
🔸 ভিয়েতনামের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জালোতে (Zalo) একটি বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু হয়েছে, যেখানে পাচারকারীদের প্রলোভনে বিভ্রান্ত না হতে সতর্ক করা হচ্ছে।
🔸 ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশনের (ECHR) ৮ নম্বর অনুচ্ছেদের (পরিবারের সাথে থাকার অধিকার) ব্যবহার সীমিত করার বিষয়ে সরকার পর্যালোচনা করছে.
যুক্তরাজ্যের কঠোর অভিবাসন নীতি নিয়ে বিতর্ক
বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে যে, রুয়ান্ডা অভিবাসন পরিকল্পনা বাতিল করাই ছিল ভুল সিদ্ধান্ত।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার বলেছেন, “অবৈধ অভিবাসন কমাতে আমরা আরও কঠোর পরিদর্শন ও আইন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি।”
এই সম্মেলনের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিবাসন নীতিতে নেতৃত্ব দিতে চায় এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে একযোগে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছে।