যুক্তরাজ্য সরকার ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী বসতি স্থাপন আন্দোলনের নেত্রী দানিয়েলা ওয়েইসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জানিয়েছেন, এই নিষেধাজ্ঞা “চরমপন্থী বসতিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি” প্রমাণ করে, কারণ ফিলিস্তিনি সম্প্রদায় সহিংসতা ও ভয়ভীতির শিকার হচ্ছে।
৭৯ বছর বয়সী ওয়েইস ‘নাচালা’ (হোমল্যান্ড) নামক একটি উগ্র বসতি স্থাপনকারী সংগঠনের প্রধান, যা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। গত কয়েক দশক ধরে তিনি পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি বসতি গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন—এই অঞ্চলগুলো ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের সময় ইসরায়েল দখল করেছিল।
নিষেধাজ্ঞার নথিতে তাকে “ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতা, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং তা উসকে দেওয়ার সঙ্গে জড়িত” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিষেধাজ্ঞাকে “অযৌক্তিক ও দুঃখজনক” বলে অভিহিত করেছে। নিষেধাজ্ঞায় আরও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে দুই বসতি স্থাপনকারী (জোহার সাবাহ এবং হরেল ডেভিড লিবি), দুটি অবৈধ আউটপোস্ট (কোকো’স ফার্ম ও নেরিয়ার ফার্ম), এবং একটি প্রতিষ্ঠান (Libi Construction and Infrastructure LTD)।

দানিয়েলা ওয়েইস সম্প্রতি লুইস থেরক্স-এর ডকুমেন্টারি “The Settlers”-এও অংশ নিয়েছেন এবং গাজায় পুনরায় বসতি স্থাপনের আন্দোলনে সক্রিয়। গত বছর বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “গাজার আরবরা গাজায় থাকবে না। কে থাকবে? ইহুদিরা।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্ব বড়। আফ্রিকা বড়। কানাডা বড়। গাজার মানুষকে বিশ্ব গ্রহণ করবে। আমরা তাদের যেতে উৎসাহিত করব। ফিলিস্তিনিরা যারা ভালো, তারা যেতে চাইবে—তাদের সুযোগ করে দিতে হবে, জোর করে নয়।”
নিষেধাজ্ঞার জবাবে ওয়েইস বলেন, শত শত পরিবার “গাজায় অবিলম্বে বসতি স্থাপনের জন্য প্রস্তুত”। তার সংগঠন ‘নাচালা’ ঘোষণা করেছে তারা “গাজা দখল, অভিবাসন এবং বসতি স্থাপন” চায় এবং ইসরায়েলের উদ্দেশে বলেছে “যুদ্ধ চালিয়ে যাও যতক্ষণ না শত্রু ধ্বংস হয়”।

ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনাও সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। কারণ, “নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকার পশ্চিম তীর ও গাজায় গুরুতর নীতিমালা অনুসরণ করছে, যা আলোচনার পথ বন্ধ করে দিয়েছে।”
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এর প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, “যদি ব্রিটিশ সরকার তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিবেচনায় ও ইসরায়েলবিরোধী মনোভাবের কারণে নিজেদের অর্থনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়, তবে সেটি তাদের সিদ্ধান্ত।”
এই পদক্ষেপটি আসে এমন এক সময় যখন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ করতে ও মানবিক সহায়তা প্রবেশে অনুমতি দিতে বলেছে।
ইসরায়েল ১১ সপ্তাহ পর গাজায় “একটি প্রাথমিক পরিমাণ খাদ্য” ঢুকতে দেবে বলে জানিয়েছে, যা তারা হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্ত করতে চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছিল।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, এই পরিমাণ সহায়তা “অত্যাবশ্যক চাহিদার তুলনায় একফোঁটা মাত্র”।