ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার আগামী সপ্তাহগুলিতে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন নামক প্রতিবাদী গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণার উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। সোমবার তিনি পার্লামেন্টে এই সংক্রান্ত একটি লিখিত প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন। প্রস্তাবটি পাস হলে, এই গোষ্ঠীর সদস্য হওয়া যুক্তরাজ্যে অবৈধ হয়ে যাবে।

এই সিদ্ধান্তটি এমন সময়ে এসেছে যখন ইউকে-জুড়ে সামরিক ঘাঁটিগুলোতে নিরাপত্তা পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। এর আগে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন-এর কর্মীরা অক্সফোর্ডশায়ারের RAF ব্রাইজ নর্টনে ঢুকে দুটি সামরিক বিমানে লাল রঙ স্প্রে করেন, যা ব্যাপক নিরাপত্তা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
এক বিবৃতিতে প্যালেস্টাইন অ্যাকশন বলেছে, “যখন সরকার তাদের নৈতিক ও আইনি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তখন সাধারণ নাগরিকদের সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব জন্মায়।”
X (সাবেক টুইটার)-এ একটি আলাদা পোস্টে তারা জানায়, “যদি আমাদের নিষিদ্ধ করা হয়, তবে এর মানে হলো—তারা আমাদের সবার কণ্ঠরোধ করতে চায় যারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে।”
যুক্তরাজ্যের সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০০ অনুযায়ী, যদি কোনো সংগঠনের কার্যক্রম সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বাস করেন, তবে তাকে আইনত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যেতে পারে। তবে এজন্য সংসদে নতুন আইনের অনুমোদন প্রয়োজন হবে, যা এমপি ও লর্ডদের দ্বারা বিতর্ক ও অনুমোদনের মাধ্যমে পাস হতে হবে।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে ৮১টি সংগঠন সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত রয়েছে।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান এই নিষেধাজ্ঞাকে “সম্পূর্ণ সঠিক সিদ্ধান্ত” হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, “সন্ত্রাসের প্রতি আমাদের সহনশীলতা শূন্য হওয়া উচিত।”
তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে বলেছে, তারা এই সিদ্ধান্তে “গভীর উদ্বেগ” প্রকাশ করছে এবং মন্তব্য করেছে: “প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের মত প্রতিবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করা অগ্রহণযোগ্য। এসব আইন কখনোই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে অপরাধে রূপান্তর করার জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়।”
প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার RAF ঘাঁটিতে হামলার ঘটনাকে “লজ্জাজনক” বলে নিন্দা জানিয়েছেন।
রিফর্ম ইউকের নেতা নাইজেল ফারাজ ও বিরোধীদলীয় বিচার বিষয়ক মুখপাত্র রবার্ট জেনরিক উভয়েই এই গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
RAF ব্রাইজ নর্টন হলো যুক্তরাজ্যের কৌশলগত বিমান পরিবহন ও রিফুয়েলিং-এর মূল কেন্দ্র। এখান থেকেই RAF আকরোতিরি (সাইপ্রাস) ঘাঁটিতে ফ্লাইট পরিচালিত হয়, যেখান থেকে গাজার ওপর নজরদারি অভিযান চালানো হয়েছে।
প্যালেস্টাইন অ্যাকশন সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানোর মাধ্যমে আলোচনায় এসেছে। মে মাসে, তারা আয়ারল্যান্ডে একটি মার্কিন সামরিক বিমানে রঙ ছড়ানোর দায় স্বীকার করে।
এদিকে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশ বাহিনী জানিয়েছে, RAF ঘাঁটির এই ঘটনাটি তারা থেমস ভ্যালি পুলিশ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলে তদন্ত করছে।
ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায়, দুজন ব্যক্তি রাতের আঁধারে ঘাঁটির ভেতরে ঢুকে একটি এয়ারবাস ভয়েজার বিমানের ইঞ্জিনে রঙ ছিটিয়ে দিচ্ছেন। সাবেক RAF উপ-কম্যান্ডার গ্রেগ ব্যাগওয়েল জানান, যেসব বিমান লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, সেগুলো মূলত যাত্রী বা জ্বালানি পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয় এবং এগুলো ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের জেট রিফুয়েলিংয়ের জন্য উপযুক্ত নয়।