বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শামীমা বেগম অবশেষে তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পেয়েছেন। বুধবার (১২ মার্চ) ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট শামীমা ও আরেকজন আবেদনকারীর পক্ষে রায় দেন। এই রায়ের মাধ্যমে শামীমা বেগমের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং তাকে ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে।
শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিলের ঘটনাটি শুরু হয় ২০১৯ সালে, যখন যুক্তরাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করেন। শামীমা ২০১৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে যুক্তরাজ্য ছেড়ে সিরিয়ায় চলে যান। সেখানে তিনি আইএসের ডাচ সদস্য ইয়াগো রিয়েডিকে বিয়ে করেন এবং তাদের তিন সন্তান হয়, যারা সবাই মারা যায়।
২০২৩ সালে শামীমার আইনজীবীরা তার নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধারের জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করেন। যদিও আপিল আদালত তার আবেদন খারিজ করে দেন, তবে সুপ্রিম কোর্টের সর্বসম্মত রায়ে শামীমা তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পেয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে, শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং তাকে ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে গণ্য করতে হবে। আদালত জানায়, শামীমা অতীতেও ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন, এখনও আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।
২০১৯ সালে ইসলামিক স্টেটের পতনের পর শামীমা বেগমকে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের আল-রোজ শিবিরে পাওয়া যায়। তিনি এখনও সেখানেই আছেন। শামীমার আইনজীবীরা জানান, শিবিরের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। সেখানে অনাহার, রোগবালাই এবং নির্যাতন নিত্যদিনের ঘটনা। শামীমা ও অন্যান্য ব্রিটিশ নারী ও শিশুদের নির্বিচারে আটকে রাখা হয়েছে।
শামীমা বেগম ইসলামিক স্টেটে যোগদানের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন এবং এখন একটি নতুন জীবন শুরু করতে চান।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তাই আমাদের অগ্রাধিকার। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত।”
শামীমা বেগমের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধারের এই রায় একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। এটি নাগরিক অধিকার ও জাতীয় নিরাপত্তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। শামীমা এখন তার ভবিষ্যত নিয়ে নতুন করে ভাবতে পারবেন এবং একটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ পাবেন। তবে তার জন্য এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে, বিশেষ করে সিরিয়ার শিবির থেকে মুক্তি পাওয়া এবং যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার প্রক্রিয়া।