বিশেষ প্রতিবেদক
রোম, ইতালি থেকে
পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উপলক্ষে সমবেত বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের ভিড়ে একপাশে দাঁড়িয়ে ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হলো সেন্ট পিটার্স বাসিলিকা—যেখানে দীর্ঘদিন পর সরাসরি মুখোমুখি হলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
কিন্তু এই ঐতিহাসিক বৈঠক নতুন আশার আলো জ্বালালেও, ট্রাম্পের কিছু মন্তব্য মনে করিয়ে দিল যে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের পথ এখনও কাঁটাময়।
ইতিহাসের আবহে এক বিশেষ সাক্ষাৎ

গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে উত্তপ্ত বৈঠকে ট্রাম্প স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন, জেলেনস্কির হাতে ‘কোনো কার্ড নেই’। সেদিনের সেই তিক্ততা এখনো পুরোপুরি কাটেনি। রোমের এই বৈঠকে ট্রাম্প আবারো মনে করিয়ে দিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের বাস্তবতা কঠিন এবং জেলেনস্কির অবস্থান নড়বড়ে।
প্রকাশিত ছবিগুলোতে দেখা গেছে, দুই নেতা গভীর আলোচনায় নিমগ্ন, তাদের চারপাশে ইউরোপের প্রধান নেতারা ঘিরে রয়েছেন—ব্রিটেনের স্যার কিয়ার স্টারমার ও ফ্রান্সের ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ধারণা করা হচ্ছে, তারাই দু’পক্ষের মধ্যে এই আলোচনার সেতুবন্ধন তৈরি করেন।
পুতিনের মনোভাব নিয়ে ট্রাম্পের শঙ্কা
ট্রাম্প বৈঠকের পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “পুতিন হয়তো কেবল আমাকে সময়ক্ষেপণ করছে।” কিয়েভে সাম্প্রতিক রাশিয়ান হামলার পর ট্রাম্পের এই মন্তব্য যুদ্ধবিরতি আলোচনা ঘিরে নতুন করে সংশয় তৈরি করেছে।
মাত্র কয়েক দিন আগে ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের মস্কো সফরের পর আশার সঞ্চার হয়েছিল। ক্রেমলিনও জানিয়েছিল, রাশিয়া কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই সরাসরি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে বাস্তবতা হলো, রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এখনো থামেনি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প হয়তো এবার আরও কঠোর কূটনৈতিক চাপের পন্থা—’ব্যাংকিং নিষেধাজ্ঞা’ বা ‘সেকেন্ডারি স্যাংশন’—চিন্তা করছেন পুতিনকে বোঝাতে।

‘কার্ডের অভাব’ বনাম ‘কৌশলের প্রগাঢ়তা’
ট্রাম্প বারবার দাবি করে এসেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে কিয়েভ যথেষ্ট নমনীয়তা দেখালে সংঘাত এড়ানো যেত। তাঁর মতে, জেলেনস্কি ‘জুয়া খেলছেন’ বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি নিয়ে।
তবে জেলেনস্কি শুরু থেকেই দৃঢ়। তিনি ইউক্রেনের ভূখণ্ডের কোনো অংশ ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। বরং তিনি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বলেন, “পূর্ণ এবং নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির মাধ্যমেই সবকিছু আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হবে।”
জেলেনস্কি এই বার্তাই রোমের আলোচনায় আবারো ট্রাম্পের কাছে তুলে ধরেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় ভূমিকা ও আগামীর সম্ভাবনা
ম্যাক্রোঁ এবং স্টারমারের উপস্থিতি এই বৈঠকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়: ইউক্রেনের শান্তির জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য একযোগে কাজ করতে আগ্রহী।
ম্যাক্রোঁ পরবর্তীতে বলেন, “শান্তি প্রতিষ্ঠা ট্রাম্পের সাথেও আমাদের একটি অভিন্ন লক্ষ্য।”
ডাউনিং স্ট্রিটও জানায়, স্টারমার ও জেলেনস্কি ‘ন্যায়সঙ্গত এবং স্থায়ী শান্তি’ প্রতিষ্ঠার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তবে বাস্তবতা হলো, যেকোনো আলোচনার অগ্রগতি নির্ভর করবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের বাস্তব রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির ওপর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির জন্য শুধু আন্তরিক ইচ্ছাই যথেষ্ট নয়, বরং প্রভাবশালী দেশগুলোর দৃঢ় কূটনৈতিক কৌশল এবং চাপ প্রয়োজন।
শান্তির সম্ভাবনা না প্রতারণার ইঙ্গিত?
রোমের এই বৈঠক বিশ্ববাসীকে ক্ষণিকের জন্য হলেও শান্তির স্বপ্ন দেখিয়েছে। তবে ট্রাম্পের সরাসরি সন্দেহ এবং রাশিয়ার চলমান হামলা স্পষ্ট করে দিয়েছে—শান্তির পথে বাধা এখনও অনেক।
বিশ্ববাসী এখন তাকিয়ে আছে, ট্রাম্প, জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় নেতারা এই জটিল সমীকরণে কোন কৌশল নেন এবং যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে কতটা এগোতে সক্ষম হন।