মুরমানস্ক, রাশিয়া (২৮ মার্চ ২০২৫):
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার আর্কটিক ফোরামে বক্তৃতাকালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণ পরিকল্পনা সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমেরিকার গ্রিনল্যান্ড সম্পর্কিত পরিকল্পনাগুলি গুরুতর এবং এর গভীর ঐতিহাসিক শিকড় রয়েছে। এটি স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র আর্কটিকে তাদের ভূ-রাজনৈতিক, সামরিক-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বার্থগুলি সুসংগতভাবে অনুসরণ করবে।”
দিমিত্রিভের প্রতিক্রিয়া:
- “আমি অর্থনীতি নিয়ে কথা বলি, রাজনীতি নিয়ে নয়। তবে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি ইতিবাচক সংলাপ চলছে।
পুতিন আরও বলেন, “গ্রিনল্যান্ডের বিষয়টি দুটি নির্দিষ্ট দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি রাশিয়ার কোনো মাথাব্যথার কারণ নয়।”তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে রাশিয়া আর্কটিকে তার বৈশ্বিক নেতৃত্ব আরও সুসংহত করবে এবং এই অঞ্চলে প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে।
গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা
২০১৯ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবারের মতো গ্রিনল্যান্ড কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। যদিও তখন এটি হাস্যকর বলে নাকচ করা হয়েছিল, তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হতে পারে। এখন ২০২৫ সালে, ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন কর্মকর্তারা আর্কটিক অঞ্চলে তাদের কৌশলগত উপস্থিতি বৃদ্ধির বিষয়ে আবারও কথা বলছেন, যা রাশিয়ার কৌশলগত অবস্থানের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া অর্থনৈতিক সহযোগিতা: বাস্তবতা নাকি কৌশল?
পুতিনের অর্থনৈতিক দূত কিরিল দিমিত্রিভ বলেন, "আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্কটিক অঞ্চলে যৌথ বিনিয়োগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছি। তবে এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা এলন মাস্কের মতো প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে কাজ করতে চাই, কারণ রাশিয়ার পারমাণবিক প্রযুক্তি মহাকাশ অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।"
পুতিনের নতুন সামরিক পরিকল্পনা
মুরমানস্কে আয়োজিত এই সম্মেলনে পুতিন বলেন, “আমরা রাশিয়ার সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত। আর্কটিক অঞ্চলে আমাদের সামরিক উপস্থিতি আমরা আরও শক্তিশালী করব।”
এরই মধ্যে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আর্কটিক অঞ্চলে নতুন সামরিক ঘাঁটি তৈরি এবং পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে।
রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক সহযোগিতা: সম্ভাবনা ও সংকট
পুতিন প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা কিরিল দিমিত্রিভ বলেন, “আমরা আর্কটিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের বিষয়ে উন্মুক্ত।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, “যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা হলে তা উভয় দেশের জন্য লাভজনক হতে পারে। তবে এই সহযোগিতা বাস্তবায়িত হওয়ার আগে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান হতে হবে।”
দিমিত্রিভ আরও বলেন, “আমরা স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠাতা এলন মাস্কের সঙ্গে সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করছি। রাশিয়া মঙ্গলগ্রহ অভিযানের জন্য পারমাণবিক প্রযুক্তি দিতে প্রস্তুত।”
নতুন বিশ্বব্যবস্থা: রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি
পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক প্রধান নিকোলাই পাত্রুশেভ বলেন, “বিশ্ব এখন বহুমুখী শক্তির দিকে এগোচ্ছে। একক আধিপত্যের যুগ শেষ হয়ে আসছে। রাশিয়া, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ এখন শক্তিশালী হয়ে উঠছে।”
Overall analysis
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক নতুন মোড় নিতে চলেছে। একদিকে ট্রাম্প প্রশাসন আর্কটিকে মার্কিন উপস্থিতি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, অন্যদিকে রাশিয়া আর্কটিক অঞ্চলে নিজেদের কর্তৃত্ব সুসংহত করতে চাচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
🔹 এই মুহূর্তে পরিস্থিতি কী বোঝাচ্ছে?
- রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।
- ট্রাম্প প্রশাসন আবারও গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের বিষয়টি সামনে আনছে।
- রাশিয়া আর্কটিক অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করছে।
- উভয় পক্ষ অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুযোগ খুঁজলেও ইউক্রেন যুদ্ধ একটি বড় বাধা।
বিশ্ব কি এক নতুন শীতল যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে।