ইরান ঘোষণা দিয়েছে যে, দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা চলমান হামলার পরিস্থিতিতে পুনরায় শুরু করা হবে না। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসায়েল জামির সতর্ক করে বলেন, ইরানের সঙ্গে চলমান সংঘাত “দীর্ঘমেয়াদী” হতে পারে এবং সামনে “কঠিন দিন” অপেক্ষা করছে।
শুক্রবার উত্তপ্ত লড়াই চলেছে দুই দেশের মধ্যে। ইরান উত্তর ইসরায়েলের দিকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে মারলে, ইসরায়েল পাল্টা জবাবে ইরানের বহু সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ ও উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জেনেভায় ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন, যেখানে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানানো হয়। তবে আরাকচি সাফ জানিয়ে দেন, ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হলে ইরান কোনো কূটনৈতিক পদক্ষেপে যাবে না।
তিনি বলেন, “ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না। এটি আমাদের সার্বভৌম অধিকার এবং তা অপরিবর্তনীয়।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে এবং ইসরায়েলের হামলা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের জাতিসংঘ দূত ইরানকে “গণহত্যাপ্রবণ” রাষ্ট্র বলে আখ্যা দেন এবং জানান, যতক্ষণ না ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হচ্ছে, ততক্ষণ ইসরায়েল হামলা চালানো বন্ধ করবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইরানকে “সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ সময়” দেওয়া হয়েছে যাতে তারা সম্ভাব্য মার্কিন বিমান হামলা এড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। “আমি তাদের সময় দিয়েছি, এবং বলব—দুই সপ্তাহই সর্বোচ্চ। তার আগে যদি তারা সমঝোতায় না আসে, আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”
ট্রাম্প ইউরোপের মধ্যস্থতাকারী ভূমিকার গুরুত্ব অস্বীকার করে বলেন, “ইরান ইউরোপের সঙ্গে কথা বলতে চায় না, তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চায়।”
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, “মধ্যপ্রাচ্য এখন এক বিপজ্জনক এবং প্রাণঘাতী পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই সঙ্কট নিরসনের জন্য আমাদের হাতে সময় খুবই সীমিত।” ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো বলেন, “ইরান সমস্যার কোনও সামরিক সমাধান নেই। সামরিক চাপ দিয়ে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা অত্যন্ত বিপজ্জনক।”
শুক্রবার ইরান আবার ইসরায়েলের হাইফা শহরে ২০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এক ইসরায়েলি নারী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, ফলে এই সংঘাতে ইসরায়েলে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫।
ইরানি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ইরানে ২২৪ জন নিহত হয়েছেন। তবে একটি মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৬৩৯ জন ছাড়িয়েছে। ইরান বলছে, তারা ইসরায়েলের উপর শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরায়েলি বিমান হামলার জবাবে।