প্রতিরক্ষা সচিব জন হিলি জানিয়েছেন, সরকারের কৌশলগত প্রতিরক্ষা পর্যালোচনার (Strategic Defence Review) অংশ হিসেবে অন্তত ছয়টি নতুন অস্ত্র ও বিস্ফোরক উৎপাদন কারখানা নির্মাণে £১.৫ বিলিয়ন খরচ করবে যুক্তরাজ্য সরকার। লক্ষ্য হলো প্রতিপক্ষদের আরও ভালোভাবে প্রতিরোধ করা।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের (MoD) মতে, এই কারখানাগুলি থেকে ৭,০০০ ব্রিটিশ-নির্মিত দীর্ঘ-পাল্লার অস্ত্র তৈরি ও সমর্থন করা সম্ভব হবে এবং প্রায় ১,৮০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
এই ঘোষণাটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ইউক্রেন যুদ্ধ পশ্চিমা দেশগুলোর অস্ত্র ও গোলাবারুদ উৎপাদনের দুর্বলতা প্রকট করে তুলেছে। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরেই সতর্ক করে আসছিলেন যে যুক্তরাজ্যের অস্ত্র মজুত উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
নতুন কারখানাগুলি নির্মাণের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য একটি “সর্বদা সক্রিয়” অস্ত্র উৎপাদন সক্ষমতা গড়ে তুলতে চায়, যা প্রয়োজনে দ্রুত বাড়ানো যাবে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ড্রোন ও মিসাইলসহ ৭,০০০ এর বেশি দীর্ঘ-পাল্লার অস্ত্র কেনা হবে।
MoD জানিয়েছে, এই নতুন অর্থায়নের ফলে বর্তমান পার্লামেন্ট মেয়াদে যুক্তরাজ্যের মুনিশন ব্যয় £৬ বিলিয়নে পৌঁছাবে।
প্রতিরক্ষা খাতে এই বাড়তি বিনিয়োগের ফলে সশস্ত্র বাহিনী আরও শক্তিশালী হবে এবং ব্রিটেনজুড়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে বলে সরকার জানিয়েছে।
চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভস বলেন:
“একটি শক্তিশালী অর্থনীতির জন্য একটি শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা দরকার। অস্ত্র ও গোলাবারুদের পেছনে বিনিয়োগ এবং ব্রিটেনজুড়ে প্রায় ২,০০০ চাকরি সৃষ্টি — এটি তারই প্রমাণ। আমরা জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি এবং একসাথে অর্থনৈতিক সুযোগও তৈরি করছি।”
প্রতিরক্ষা সচিব হিলি আরও বলেন, যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা শিল্প “অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিনে” পরিণত হবে এবং প্রতিটি অঞ্চলেই দক্ষ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।
“পুতিনের ইউক্রেনে অবৈধ আগ্রাসন থেকে পাওয়া কঠিন শিক্ষাগুলি আমাদের দেখিয়েছে, একটি সেনাবাহিনী কেবল তখনই শক্তিশালী, যখন এর পেছনে শক্তিশালী শিল্পভিত্তি থাকে।”
পশ্চিমা সামরিক নেতারা বহুদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন যে যেকোনো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের গোলাবারুদ দ্রুত ফুরিয়ে যেতে পারে।
২০২১ সালে, ইউরোপে মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান জেনারেল বেন হজেস ব্রিটিশ এমপিদের বলেছিলেন, একটি কল্পিত যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অস্ত্রভাণ্ডার মাত্র আট দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান জেনারেল স্যার প্যাট্রিক স্যান্ডার্সও অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তিনি সম্প্রতি বলেছেন, গোলাবারুদের সংকট এতটাই গুরুতর যে “শুনলে গায়ে কাঁটা দেবে”।
বর্তমানে যুক্তরাজ্য গোলাবারুদের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। নতুন চুক্তির মাধ্যমে আরও জটিল অস্ত্র যেমন NLAW (লাইট অ্যান্টি-ট্যাংক অস্ত্র) এবং দীর্ঘ-পাল্লার Storm Shadow (SCALP) ক্রুজ মিসাইল তৈরির কাজ চলছে।
এই অস্ত্রগুলো ইউক্রেনে সরবরাহ করা হয়েছে, তবে অতীতে এগুলোর উৎপাদন ধীরগতির ছিল। প্রকৃত উৎপাদনের পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয় না।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে বিস্ফোরক ও প্রপেল্যান্টের (জ্বালানী পদার্থ) চাহিদাও অনেক বেড়েছে।