ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৫ সালে দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তার প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে একাধিক বিতর্কিত ও নাটকীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, এবার তিনি “ধ্বংসস্তূপ থেকে আমেরিকাকে নতুন করে গড়ে তুলবেন,” এবং সেই উদ্দেশ্য পূরণে দ্রুত, কঠোর ও আগ্রাসী পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এই ১০০ দিনের মধ্যে ট্রাম্প ১৪১টি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন, যা মার্কিন ইতিহাসে প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তিনি একাধিক প্রশাসনিক সংস্থা পুনর্গঠন করেছেন, যার মধ্যে অন্যতম হলো “Department of Government Efficiency”—একটি নতুন সংস্থা যার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এলন মাস্ক। এই সংস্থার উদ্দেশ্য সরকারি খরচ হ্রাস, আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সরলীকরণ এবং ডিজিটাল রূপান্তর ঘটানো। যদিও এই উদ্যোগ অনেকের কাছে উদ্ভাবনী মনে হয়েছে, সমালোচকরা একে “প্রাইভেটাইজেশনের ছদ্মবেশে আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের বিলোপ” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
অর্থনৈতিক দিক থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের শুরুর দিকটা বিশেষ সুখকর ছিল না। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে মার্কিন অর্থনীতি ০.৩% সংকুচিত হয়েছে, যা ২০২২ সালের পর প্রথমবারের মতো অর্থনীতির ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে। ট্রাম্প এই অবনমনকে বাইডেন প্রশাসনের “উত্তরাধিকার” হিসেবে দায়ী করলেও, বহু অর্থনীতিবিদ বলছেন তার নতুন ট্যারিফ এবং শুল্ক নীতি এই মন্দার জন্য দায়ী। ট্রাম্প চীনের ওপর পুনরায় শুল্ক আরোপ করেছেন, পাশাপাশি ইউরোপ ও কানাডার সাথেও বাণিজ্য চুক্তি পুনর্বিবেচনার ঘোষণা দিয়েছেন, যা বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে।
অভিবাসন ইস্যুতে ট্রাম্প তার আগের মেয়াদের মতোই কঠোর মনোভাব বজায় রেখেছেন। দক্ষিণ সীমান্তে তিনি নতুন করে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছেন এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ “৯৫% হ্রাস পেয়েছে” বলে দাবি করেছেন। তিনি ১৭৯৮ সালের “Alien Enemies Act” ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলা, হাইতি, ও সিরিয়া থেকে আগত অভিবাসীদের নির্বাসনের নির্দেশ দিয়েছেন, যা মানবাধিকার সংস্থাগুলির কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে এবং এখনো আদালতে আইনি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
জনসাধারণের কাছে ট্রাম্পের ভাষণ ও বক্তব্যও ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, তার প্রশাসন গ্যাসের দাম $1.98-এ নামিয়ে এনেছে এবং ডিমের দাম “৮৭% কমেছে,” অথচ প্রকৃত তথ্য অনুযায়ী গ্যাসের গড় দাম ছিল $2.67 এবং ডিমের দাম ছিল $6.23 প্রতি ডজন। এই ধরণের অসংগতিপূর্ণ তথ্য উপস্থাপনের জন্য সংবাদমাধ্যম ও তথ্য যাচাইকারী সংস্থাগুলি ট্রাম্পকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছে। তবুও তার সমর্থকদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা অটুট রয়েছে, এবং তিনি এই তথ্যগুলোকে “মিডিয়ার বিভ্রান্তি” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
বৈদেশিক নীতিতেও ট্রাম্প আগের মতোই “আমেরিকা ফার্স্ট” দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি ন্যাটোর মিত্রদের সঙ্গে নতুন সামরিক অর্থায়ন চুক্তির দাবি করেছেন, যার ফলে ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক কিছুটা টানাপোড়েনের মধ্যে পড়েছে। ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তর্জাতিক উদ্যোগ থেকে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন এবং জাতিসংঘের একাধিক কমিটিতে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান হ্রাস করেছেন।
মোট মিলিয়ে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম ১০০ দিন ছিল অত্যন্ত গতিশীল, বিতর্কপূর্ণ এবং গভীর রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টিকারী। তার প্রশাসন দ্রুতগতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, কিন্তু বাস্তবায়নে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। দেশীয় নীতিমালা থেকে শুরু করে বৈশ্বিক সম্পর্ক পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে এই ১০০ দিন আমেরিকান রাজনীতির একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।