মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেডারেল অর্থায়নে পরিচালিত ভয়েস অব আমেরিকা (VOA)-এর কার্যক্রম বৃহত্তর মাত্রায় সংকুচিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে সংস্থাটি “বামপন্থী”, “অ্যান্টি-ট্রাম্প” এবং “উগ্রপন্থী প্রচারণা” চালায়।
VOA-এর কার্যক্রম সীমিতকরণের মূল কারণ কী?
হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই আদেশের ফলে “করদাতাদের অর্থ আর উগ্র প্রোপাগান্ডার জন্য ব্যয় হবে না”। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, VOA ও এর সহ-প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রের অর্থ ব্যবহার করে পক্ষপাতমূলক সংবাদ প্রকাশ করছে এবং ট্রাম্প-বিরোধী প্রচারণায় লিপ্ত রয়েছে।
এর ফলে VOA-এর মূল প্রতিষ্ঠান U.S. Agency for Global Media (USAGM)-এর অধীনে থাকা রেডিও ফ্রি ইউরোপ (RFE), রেডিও ফ্রি এশিয়া (RFA)-এর মতো স্বাধীন সংবাদমাধ্যমগুলোর তহবিল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
কী প্রভাব পড়বে এই সিদ্ধান্তের ফলে?
📌 VOA-এর ১৩০০ কর্মী বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
📌 ফ্রিল্যান্স ও আন্তর্জাতিক কর্মীদের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
📌 রেডিও ফ্রি ইউরোপ ও রেডিও ফ্রি এশিয়ার অনুদান সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
📌 VOA-এর সম্প্রচার কার্যক্রম প্রায় স্থগিত হয়ে যাবে।
VOA-এর পরিচালক মাইক আব্রামোভিৎস জানিয়েছেন যে এই আদেশের ফলে সংস্থার কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাপী যখন ইরান, চীন ও রাশিয়া আমেরিকার বিরুদ্ধে ভুয়া প্রচারণা চালাচ্ছে, তখন VOA বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের পক্ষ থেকে সত্য প্রচারের সুযোগ কমে যাবে।”
প্রেস স্বাধীনতার জন্য হুমকি?
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সাংবাদিক সংগঠন ন্যাশনাল প্রেস ক্লাব এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে,
🗣️ “যদি পুরো একটি সংবাদ সংস্থাকে একরাতে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া যায়, তাহলে আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এটি শুধু একটি কর্মসংস্থান ইস্যু নয়, এটি একটি বৃহৎ পরিবর্তন, যা স্বাধীন সাংবাদিকতার ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।”
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্ত গণমাধ্যমের অবস্থান দুর্বল করবে এবং স্বৈরাচারী দেশগুলোর ভুয়া প্রচারণা আরও শক্তিশালী হবে।
ইলন মাস্কের সমর্থন ও ট্রাম্পের অতীত সমালোচনা
বিখ্যাত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক, যিনি ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, VOA বন্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘X’-এ লিখেছেন,
💬 “VOA-কে এখন আর কেউ শোনে না। এটি সময়ের অপচয় ও বাজেটের অপব্যবহার।”
প্রসঙ্গত, ট্রাম্প তার প্রথম প্রেসিডেন্ট মেয়াদেও VOA-এর কড়া সমালোচক ছিলেন। সম্প্রতি তিনি তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ক্যারি লেককে USAGM-এর বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, যা VOA-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
VOA প্রতিষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ সালে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল নাৎসি ও জাপানি প্রচারণার বিরুদ্ধে লড়াই করা। এটি বিশ্বব্যাপী ৪০০ মিলিয়ন (৪০ কোটি) মানুষকে ৫০টিরও বেশি ভাষায় সংবাদ পরিবেশন করে।
💡 ১৯৭৬ সালে প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড একটি চার্টার স্বাক্ষর করেন, যা VOA-এর সম্পাদকীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। তবে ২০২৫ সালে ট্রাম্পের নতুন আদেশের ফলে এই ঐতিহ্য এখন হুমকির মুখে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, VOA-এর কার্যক্রম সংকুচিত হলে, এটি শুধুমাত্র একটি সংবাদমাধ্যমের ক্ষতি নয় বরং আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থানের দুর্বলতার প্রতীক হয়ে উঠতে পারে।