গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলের আল-মাওয়াসি এলাকায় ৬০ বছর বয়সী দাদী ওয়াফা কাবলান বলেন, “আমরা সর্বশেষ পূর্ণ খাবার খেয়েছিলাম পরশুদিন। গতকাল কিছুই খাইনি।” তিনি জানান, আজ সকালে তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্য খাবার বিতরণকেন্দ্রে গিয়েছিলেন, কিন্তু তারা খালি হাতে ফিরে এসেছেন।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, “গাজার মানবিক পরিস্থিতি এখন এক অন্ধকার পর্যায়ে প্রবেশ করছে।
ইসরায়েল যে সাহায্য আটকে রেখেছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

তিনি আরও বলেন, “নেতানিয়াহুর সরকার তাদের কার্যকলাপ ও উগ্র অবস্থানের কারণে ইসরায়েলকে তার দীর্ঘদিনের বন্ধু ও মিত্রদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে।”
ল্যামি ঘোষণা দেন, যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছে এবং ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে।
“বড়রা না হয় না খেয়ে থাকতে পারে, কিন্তু বাচ্চারা কীভাবে সহ্য করবে?” বলেন তিনি। তাঁর নাতিরা চরম দুর্বলতায় হাঁটার সময় বারবার বিশ্রাম নিচ্ছে। পানির অভাবে তিনি চার মাসের নাতির জন্য দুধ তৈরি করতেও পারছেন না।
গাজায় বর্তমানে শিশুরা চরম অপুষ্টি ও ক্ষুধার কবলে পড়ছে। জাতিসংঘের শীর্ষ মানবিক কর্মকর্তা টম ফ্লেচার সতর্ক করে বলেন, পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ১৪,০০০ নবজাতকের মৃত্যু হতে পারে যদি খাদ্য ও ওষুধ না পৌঁছায়।
BBC Arabic-এর খবরে জানা যায়, বহু মা তাঁদের সন্তানদের দুর্বল হয়ে পড়তে দেখছেন। সাত মাসের এক শিশুর মা শাহিনাজ জানান, তাঁর সন্তান সারাক্ষণ ক্ষুধায় কাঁদছে। ফাতিমা খামিস নামের এক মা বলেন, তাঁর দুধ বন্ধ হয়ে গেছে এবং শিশুর জন্য ফর্মুলা কিনতে পারছেন না। আরেকজন মা জানান, গর্ভাবস্থায় পুষ্টির অভাবে তাঁর শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে।
এদিকে, দীর্ঘ চাপের পর ইসরায়েল ১১ সপ্তাহের অবরোধের পর কিছু সহায়তা প্রবেশ করতে অনুমতি দিয়েছে। আজ প্রায় ১০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের কথা থাকলেও, এখনও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। জাতিসংঘ বলছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রতিদিন অন্তত ৬০০টি ট্রাক প্রয়োজন।
কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে কিছু ট্রাক ঢুকলেও, অনেক ট্রাক এখনো পরিদর্শনের জন্য অপেক্ষমাণ। খাদ্য, ওষুধ ও শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য থাকলেও এসব পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে।
গাজার চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি ও মানবিক সংকটের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগও বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, গাজা থেকে কিছু ফিলিস্তিনি স্বেচ্ছায় অন্য দেশে যেতে চাইলে কিছু আরব দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। “এই মানুষগুলোকে আটকে রাখা উচিত নয়,” বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, “আমরা খুশি যে ইসরায়েল অবশেষে কিছু সহায়তা প্রবেশ করতে দিয়েছে এবং আশা করছি এটি অব্যাহত থাকবে।”
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছে এবং লন্ডনে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, “ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড তার আন্তর্জাতিক বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন করছে এবং মানবিক সহানুভূতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, তারা “বাহ্যিক চাপে দিক পরিবর্তন করবে না” এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষাই তাদের অগ্রাধিকার।
গাজায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে না পারলে, সেখানে শিশুদের জীবন দ্রুত হুমকির মুখে পড়বে বলে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো হুঁশিয়ারি দিয়েছে।