গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন সামরিক অভিযানের ফলে রাফাহ শহর এবং খান ইউনিসের কিছু অংশ থেকে হাজার হাজার মানুষ আবার পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নতুন সরিয়ে নেওয়ার আদেশের কারণে গাজার এক-পঞ্চমাংশ এলাকা এখন বাস্তুচ্যুতির আওতায় পড়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ও মানবিক সংকট
১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল নতুন করে হামলা শুরু করে, যার পেছনে কারণ হিসেবে তারা হুমাসকে দায়ী করছে। ইসরায়েল দাবি করছে যে, হুমাস নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ৫৯ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেয়নি।
অন্যদিকে, হুমাস জানিয়েছে, ইসরায়েলই জানুয়ারির চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই নতুন হামলায় এখন পর্যন্ত ১,০০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছে।
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করে দিয়েছে যে, গাজার ২.১ মিলিয়ন মানুষের জন্য খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। কারণ, ইসরায়েল ২ মার্চ থেকে মানবিক সাহায্যের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।
রাফাহে মানবিক বিপর্যয়
গত বছরের মে মাসে ইসরায়েলি বাহিনী রাফাহে প্রথম বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালায়, যা শহরটির বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। পরে যুদ্ধবিরতির সময়, হাজার হাজার মানুষ তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘরে ফিরে আসেন। কিন্তু এখন, নতুন অভিযানের কারণে তারা আবার বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন।
রাফাহর বাসিন্দা হাইফা দুহাইর বলেন, তিনি তার নবজাতক কন্যা এবং তিনটি ছোট ছেলেমেয়েকে নিয়ে হেঁটে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, কারণ সেখানে কোনো যানবাহন পাওয়া যাচ্ছিল না।
He said, “আমরা দুই মাস আগে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলাম… যদিও আমাদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, গোলার আঘাতে জানালাগুলো ভেঙে পড়েছে। আমার মেয়ে তাঁবুতেই জন্ম নিয়েছিল, আর আজ তারা পুরো রাফাহ খালি করার আদেশ দিয়েছে।”
গাজার উত্তর ও মধ্যাঞ্চলেও হামলা চলছে
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজার উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে তাদের “নিরাপত্তা বেষ্টনী” সম্প্রসারিত করছে। এর অংশ হিসেবে, তারা হুমাসের ১ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ ধ্বংস করেছে এবং ৫০ জনের বেশি হুমাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।
তবে, সাধারণ ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ, এসব অভিযানের কারণে নিরপরাধ মানুষও মারা যাচ্ছে। গাজা সিটির তুফফাহ অঞ্চলে এক বিমান হামলায় আটজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে তিন শিশু ও দুই নারী রয়েছেন।
রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও ভবিষ্যৎ সংকট
এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল ৭ অক্টোবর ২০২৩, যখন হুমাস ইসরায়েলে একটি নজিরবিহীন হামলা চালায়। সেই হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে, যা এখনো চলছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৫০,৩৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক।
International reaction
জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করেছে, কারণ তারা যথাযথ মানবিক সহায়তা প্রদান করছে না বা সরিয়ে নেওয়া জনগণের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেনি।
তবে, ইসরায়েল বলছে যে, তারা কেবলমাত্র হুমাসের সামরিক শক্তি ধ্বংস করতেই অভিযান চালাচ্ছে এবং বেসামরিক মানুষের ক্ষতি এড়ানোর চেষ্টা করছে।
এই ক্রমবর্ধমান সংঘাতের ফলে গাজার জনগণের দুর্ভোগ আরও বেড়েই চলেছে। যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও, এখনো স্থায়ী সমাধানের কোনো ইঙ্গিত নেই।
আপনি কি এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত আপডেট চান?
4o