কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিল যে নৃশংস সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছে, তা ভারতের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। এই হামলার পর ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও সজাগ এবং বিবেচনাপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে বার্তা দেওয়া হয়েছে, যাতে ভারত সরকার উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি না করে, বরং রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
জাতীয় ঐক্যের আহ্বান: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে দাঁড়ানোর বার্তা
মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, “কাশ্মীরের এই সন্ত্রাসী হামলার পর রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত একে অপরকে দোষারোপ না করে, বরং জাতীয় স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করা। এই ধরনের পরিস্থিতিতে একতার পরিচয় দেয়াই আমাদের শোকের সময়ের কাছে প্রাপ্য সম্মান। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কোনো আপোস করা উচিত নয়, তবে আমাদের কৌশল ও অবস্থান হতে হবে নির্মম এবং দায়িত্বশীল।”
তিনি আরও বলেন, “কাশ্মীরের মানুষের নিরাপত্তা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা চাই সরকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় শান্তিপূর্ণ উপায়ে এগিয়ে যাক এবং একে সামরিক সমাধানের পেছনে না গিয়ে, কূটনৈতিক ও বৈশ্বিক সমর্থন দিয়ে সমাধান করতে পারে।”
সেনাবাহিনীর স্বাধীনতার ওপর প্রশ্ন এবং সমন্বিত কৌশলের দাবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘সশস্ত্র বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার’ ঘোষণার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে খাড়গে বলেন, “আমরা সেনাবাহিনীকে সমর্থন জানাই, কিন্তু তাদেরকে পুরোপুরি স্বাধীনতা দেওয়া মানে রাজনৈতিক দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা। সেনাবাহিনীর স্বাধীনতা সীমিত নয়, তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারকে স্পষ্ট কৌশল তৈরি করে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। সেনাবাহিনী এবং সরকারের মধ্যে একটি পরিস্কার সমন্বয় থাকা প্রয়োজন, যাতে সন্ত্রাসবাদ দমনেও সফল হওয়া যায় এবং এই সমাধান দীর্ঘস্থায়ী হয়।”
তিনি আরও বলেন, “যখন কোনও দেশের নিরাপত্তা বাহিনী পুরোপুরি স্বাধীনতা পায়, তখন তার পেছনে অনেক সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও কাজ করে থাকে, যা কখনো কখনো ভুলভাবে ব্যাখ্যা হতে পারে এবং দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে। সরকারকেও অবশ্যই এই পরিস্থিতি মাথায় রেখে চিন্তা করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে ভারসাম্যপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে।”
গোয়েন্দা ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রসঙ্গ
কাশ্মীর হামলার পরবর্তী সময়ে গোয়েন্দা ব্যর্থতার বিষয়টি তুলে ধরেছেন কংগ্রেস সভাপতি। তিনি বলেন, “গোয়েন্দা তৎপরতা কখনোই ১০০ শতাংশ সফল হয় না, তবে যখন এত বড় একটি হামলা ঘটেছে, তখন সেই হামলার আগে কীভাবে সঠিক তথ্য পেতে পারা যায়নি, সেটি খুবই গুরুত্বের বিষয়। যদি সরকারের গোয়েন্দা তৎপরতার শৈলী এবং প্রস্তুতির অভাব থাকে, তবে গোটা দেশকে তার ফলাফল ভোগ করতে হতে পারে।”
“এই হামলা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার কার্যকারিতা এবং পরিস্কারভাবে তৎপরতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তৈরি করেছে। সরকারের এই বিষয়ে সরাসরি জবাবদিহি করা উচিত। আমাদের আশঙ্কা, সরকার এই গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে অবহেলা করছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না,”—এমন মন্তব্যও করেন তিনি।
জাতীয় নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার: ভারতীয় কূটনীতির গুরুত্ব
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আরও একটি গুরুতর বিষয় তুলে ধরা হয়—যে কূটনৈতিক সমর্থন ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাড়গে বলেন, “কাশ্মীরের পরিস্থিতি শুধুমাত্র সামরিক শক্তির মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব নয়, বরং আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের অবস্থান আরও দৃঢ় করা জরুরি। ভারতকে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের কাছেও শান্তির পক্ষ অবলম্বনকারী শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সামরিক বাহিনীর পদক্ষেপের পাশাপাশি সরকারের কূটনৈতিক কৌশলও গুরুত্বপূর্ণ।”
পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের গুরুত্ব
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা, অর্থনীতি এবং যোগাযোগের দিক থেকে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের স্থিতিশীলতা প্রয়োজনীয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। “যদিও পাকিস্তান বহুবার সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সমর্থন দেওয়ার জন্য দায়ী হয়েছে, তবুও, শান্তিপূর্ণ সমাধানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ,”—এটি কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আসা একটি বার্তা।
মোদির নেতৃত্বে ভারতে গণতন্ত্রের মানদণ্ড এবং জাতীয় ঐক্য রক্ষার আহ্বান
মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, “ভারতকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদের গণতান্ত্রিক মুল্যবোধ এবং জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে হবে। শান্তির জন্য সরকারের কঠিন পদক্ষেপ প্রয়োজন, তবে জনগণের নিরাপত্তা এবং মানবাধিকারও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক কৌশল কিংবা রাজনৈতিক আলোচনার মধ্যে কোনো একটিকেই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।”
সংসদে জবাবদিহি এবং সরকারের ভূমিকা
তিনি এও বলেন, “ভারতের পার্লামেন্টে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া উচিত। সরকার যেন সংসদে এসে এসব প্রশ্নের উত্তর দেয় এবং সংসদীয় কমিটিতে আত্মবিশ্বাসী সমাধানের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে। যে কোনো পরিস্থিতিতে, সরকারকে অবশ্যই জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে।”