সম্প্রতি কাশ্মীরে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলাটি নিছক একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি একটি গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। এই হামলার পেছনে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কিছু অজানা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য লুকিয়ে থাকতে পারে। বিশেষ করে, যখন দেশজুড়ে ওয়াকফ সংশোধন বিল নিয়ে বিরোধিতা এবং বিতর্ক তুঙ্গে, তখন জনগণের মনোযোগ ওই ইস্যু থেকে সরিয়ে দিতে কাশ্মীরে এই হামলার নাটক সাজানো হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার তুলনা তুলে ধরেছেন বিশ্লেষকরা, যেখানে ঠিক এমনই একটি পরিস্থিতিতে, যখন জাতীয় নির্বাচন আসন্ন ছিল, একটি ভয়াবহ হামলা ঘটেছিল। ওই হামলায় ৪০ জন ভারতীয় জওয়ানের প্রাণহানি ঘটেছিল এবং গোটা দেশে এক ভীতি ও ক্ষোভের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। এর মাধ্যমে বিজেপি দেশব্যাপী একটি ঐক্যবদ্ধ ভোটব্যাংক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল এবং নির্বাচনে তাদের জয় নিশ্চিত করতে সমর্থ হয়েছিল। সেই সময় সরকার রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য জনগণের আবেগকে কাজে লাগিয়েছিল। ঠিক একইভাবে, এখন আবার কাশ্মীরে সংঘটিত এই হামলাটিকে বিজেপি রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের জন্য ব্যবহার করতে পারে, এমন ধারণা অনেকের মধ্যে তৈরি হয়েছে।
ভোটব্যাংক তৈরির কৌশল:
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাশ্মীরে সাম্প্রতিক হামলা কোনও সাধারণ সন্ত্রাসী কার্যক্রম নয়। এটি অনেকটাই একটি সুপরিকল্পিত কৌশল হতে পারে, যেখানে সরকারের উদ্দেশ্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ার আগে জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া। সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা এবং “দেশপ্রেম” এর ঢেউ তুলতে চাইছে সরকার, যাতে ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের জাতীয়তাবাদী আবেগ তৈরি হয়। এর মাধ্যমে সরকার ঐক্যবদ্ধ ভোটব্যাংক তৈরির চেষ্টা করতে পারে, যেটি নির্বাচনের সময় তাদের জন্য রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে।
নির্বাচনী কৌশল হিসেবে সন্ত্রাসী হামলা:
২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলাও ঠিক এমন একটি সময়ে ঘটেছিল, যখন ভারতীয় জাতীয় নির্বাচন সামনে ছিল। ওই হামলার পর সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বালাকোট এয়ারস্ট্রাইক পরিচালনা করেছিল। এই পদক্ষেপটির মাধ্যমে সরকারের “মুখোশ” দেশপ্রেমের ধারণা উজ্জ্বল হয়েছিল এবং জনগণকে একত্রিত করতে সহায়ক হয়েছিল। পুলওয়ামা হামলার পর বিজেপি নির্বাচনী প্রচারণায় একটি জাতীয়তাবাদী সুর তোলার মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা অর্জন করেছিল, যা তাদের ভোটব্যাংক শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
এবারও, কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাশ্মীরে হামলার ঘটনা এবং ওয়াকফ সংশোধন বিল নিয়ে চলছে বিতর্কের সময় এরকম একটি হামলা ঘটানোকে “রাজনৈতিক নাটক” হিসেবে দেখছেন। এই হামলা, যদি একান্তই সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হয়, তবে তা দেশের জনগণের জীবনের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলার পাশাপাশি, গণতন্ত্র ও নির্বাচনী প্রক্রিয়াকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে দেবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর অস্বচ্ছতা এবং জনগণের নিরাপত্তা:
একই সঙ্গে, এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে, কিছু রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মানুষের জীবন, নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থকেও তুচ্ছ করতে দ্বিধা করে না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এমন ঘটনাগুলোর মাধ্যমে জনগণের আবেগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, যা একদিকে জনগণের নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থের প্রতি উদাসীনতার ইঙ্গিত দেয়, অন্যদিকে এটি দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
বিশ্বমঞ্চে ভারতের ভাবমূর্তি:
কাশ্মীরে হামলার ঘটনাটি শুধু ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য নয়, বরং দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। একটি সন্ত্রাসী হামলা যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ঘটানো হয়, তবে তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সন্দেহ ও অস্বস্তির সৃষ্টি করবে। এমন পরিস্থিতি বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছ থেকে সমালোচনা এবং তিরস্কারের মুখোমুখি হতে পারে, যা ভারতকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।
নির্বাচনী রাজনৈতিক কৌশল:
এটি নিঃসন্দেহে একটি আলোচনার বিষয়, যে কিভাবে রাজনৈতিক দলগুলি জনগণের আবেগ এবং নিরাপত্তাকে নিজেদের রাজনৈতিক কৌশলের জন্য ব্যবহার করতে পারে। নির্বাচনী কৌশল হিসেবে সন্ত্রাসী হামলা বা দেশপ্রেমের প্রবাহ তৈরি করা একটি ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক খেলা হতে পারে। এর ফলে শুধু দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিই বিপন্ন হবে না, বরং জনগণের আস্থা এবং বিশ্বাসও ক্ষুণ্ণ হতে পারে।
বিশ্বস্ত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা একটি বড় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে, যা নির্বাচনী কৌশল হিসেবে কাজে লাগানোর জন্য পরিকল্পিত হয়েছে। এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, কিছু রাজনৈতিক শক্তি মানুষের জীবন ও নিরাপত্তাকে তাদের ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য ব্যবহারের প্রতি বিন্দুমাত্র দয়াশীল নয়। সরকার যদি এই ধরনের পরিস্থিতির মোকাবেলা না করে, তবে আগামীতে এর আরও বড় রাজনৈতিক এবং জাতীয় প্রভাব পড়তে পারে, যা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে হুমকির মুখে ফেলবে।