কুশিনগর, ভারত – ৯ জুলাই ২০২৫
উত্তর প্রদেশের কুশিনগর জেলার একটি গ্রামে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন নিজেরাই একটি মসজিদ ভেঙে ফেলেছেন, যা নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগ ও আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রশাসনের নোটিশ ও হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর হুমকির মুখে এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
কি ঘটেছে ঘটনাস্থলে?
চিন্তামণি গাধিয়া নামক গ্রামে বহু বছর ধরে একটি মসজিদ ও ঈদগাহ বিদ্যমান ছিল। তবে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো দাবি করে আসছিল যে, এই ধর্মীয় স্থাপনাগুলো ‘সরকারি জমিতে অবৈধভাবে’ নির্মিত হয়েছে। তারা মসজিদের অবস্থান ‘গাটা নং ৬৪৫ ও ৬৪৮’ নামক রাজস্ব জমিতে বলে অভিযোগ দায়ের করে।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় প্রশাসন রাজস্ব আইনের ৬৭ ধারা অনুসারে একটি উচ্ছেদ নোটিশ জারি করে এবং মসজিদের প্রবেশপথে তা ঝুলিয়ে দেয়। নোটিশে বলা হয়, যদি স্বেচ্ছায় গঠন ভাঙা না হয়, তাহলে কর্তৃপক্ষ বুলডোজার পাঠাবে।
আদালতের শরণাপন্ন হলেও লাভ হয়নি
মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় মুসলিমরা প্রথমে প্রশাসনিক ও আইনি পথে সমাধান খুঁজতে চেষ্টা করেন। তারা এডিএম আদালত এবং এলাহাবাদ হাইকোর্টে আবেদন করেন। কিন্তু প্রতিকূলতা কাটিয়ে মসজিদ রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তিন মাস পরে এডিএম কর্তৃপক্ষও ‘ছয় মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে’ তহসিল কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
অবশেষে নিজেরাই করলেন ভাঙচুর
স্থানীয় মুসলিমরা ক্রমাগত চাপ, হুমকি ও নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত মসজিদটি নিজেরাই ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। মসজিদ কমিটির একজন সদস্য বলেন, “আমরা কোনো সংঘাত বা রক্তপাত চাই না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হোক তা আমরা চাই না। তাই আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মসজিদ সরিয়ে নিচ্ছি।”
হিন্দুত্ববাদীদের প্রতিক্রিয়া
মুসলিমদের এই পদক্ষেপ উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর কাছ থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছে। তারা এই ঘটনাকে ‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধা’ এবং ‘সাম্প্রদায়িক শান্তির নজির’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। তবে মানবাধিকারকর্মীরা এই ঘটনাকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ‘আক্রান্ত রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক চাপের প্রতিচ্ছবি’ বলে বর্ণনা করছেন।
বিশ্লেষণ
এই ঘটনাটি বর্তমান ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। একইসঙ্গে এটা প্রশাসনের ভূমিকা, রাজনৈতিক চাপ এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীর প্রভাব কতটা গভীর তা দেখিয়ে দেয়।