ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বহু প্রতীক্ষিত আলোচনা শুরু হয়েছে ওমানের রাজধানী মাসকটে। এটি ২০১৮ সালের পর দুই দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে জানান, “আমরা একটি ন্যায্য চুক্তি চাই,” এবং তার মুখপাত্র বলেন, তারা আশা করছেন না আলোচনাটি দীর্ঘ হবে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে ইরান ও বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে সম্পাদিত পূর্ববর্তী চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, তিনি একটি “আরও ভালো” চুক্তি করতে চান।
এখনও নিশ্চিত নয়, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল একই ঘরে বসে আলোচনা করবে কিনা, তবে বিশ্লেষকদের মতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক পদক্ষেপ, যা একটি কার্যকর চুক্তির সম্ভাবনা ও আলোচনার কাঠামো নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে।
আরাকচি বারবার বলেছেন, এই পর্যায়ে পরোক্ষ আলোচনা উপযুক্ত হবে। অন্যদিকে, মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তিনি মুখোমুখি বৈঠকের ওপর জোর দিয়েছেন। তবে আলোচনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো – দুই পক্ষ আসলে কী ধরনের চুক্তি চাইছে।
ট্রাম্প গত মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাধ্যমে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার কাছে একটি চিঠি পাঠান। সেই চিঠিতে তিনি বলেন, তিনি এমন একটি চুক্তি চান যা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখবে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্ভাব্য সামরিক হামলা ঠেকাবে।
ইরান বলছে, তারা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে পারে, তবে পুরোপুরি বন্ধ নয়, যদি তার বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
আরাকচি বলেন,
“আমাদের উদ্দেশ্য হলো এক সমতাভিত্তিক ও সম্মানজনক চুক্তিতে পৌঁছানো। যদি অপর পক্ষও সমান দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসে, তাহলে আমরা প্রাথমিক বোঝাপড়ায় পৌঁছাতে পারি যা আলোচনার পথ খুলে দেবে।”
তিনি আরও বলেন, তার দলে এমন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন যারা পূর্বেও এই ইস্যুতে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন এবং যারা পারমাণবিক বিষয়ক আলোচনায় দক্ষ।
একজন ওমানি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আলোচনায় শুধু পারমাণবিক ইস্যু নয়, বরং আঞ্চলিক উত্তেজনা প্রশমিত করা এবং বন্দি বিনিময় বিষয়েও আলোচনা হবে।
এই আলোচনার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি বলেন, ওমানের এই সপ্তাহান্তের বৈঠক হবে “খুব গুরুত্বপূর্ণ”। তবে তিনি সতর্ক করেন, আলোচনা ব্যর্থ হলে ইরানের জন্য “খুব খারাপ দিন” হবে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মঙ্গলবার জানান, তিনি এবং ট্রাম্প একমত হয়েছেন যে, “ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করবে না।”
ইরান বরাবরই দাবি করে এসেছে যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ এবং তারা কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বা অর্জন করবে না। তবে ২০১৫ সালের চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের পর, ইরান চুক্তির নানা সীমাবদ্ধতা লঙ্ঘন করে চলেছে। এতে করে তারা উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ করেছে, যা পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য ব্যবহারযোগ্য।
উল্লেখযোগ্যভাবে, মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন সেন্ট পিটার্সবার্গে, যেখানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এর ফলে তিনি এখন দুই গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ইস্যু – পারমাণবিক চুক্তি ও ইউক্রেন যুদ্ধ – উভয়ের কূটনীতিতে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় রয়েছেন।
এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিকভাবে অনেক কিছু নির্ভর করছে এই ওমান বৈঠকের ফলাফলের উপর। চুক্তির সম্ভাবনা যেমন আশাবাদের জন্ম দিচ্ছে, তেমনি ব্যর্থতার আশঙ্কাও আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।