নিউজ রিপোর্ট:
ইরানে চলমান সংঘাত ও রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছেন দেশটির ক্ষমতাচ্যুত রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স রেজা পাহলাভি। ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীকে জনগণের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বিশ্লেষকদের মতে, দেশের ভেতরকার অস্থিরতাকে পুঁজি করে আবারও রাজনীতিতে ফিরতে চাইছেন পাহলাভি।

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত এই রাজপুত্র বরাবরই ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সমালোচক। তিনি চান, ইরান ফিরে যাক ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়। তার বক্তব্যে সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল ও পশ্চিমা শক্তির প্রতিধ্বনি পাওয়া যাচ্ছে। প্রকাশ্যেই তিনি বলেছেন, ‘খামেনি ও ইসলামী প্রজাতন্ত্র এই যুদ্ধের কারণ, এটা ইরানি জনগণের লড়াই নয়।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়াশিংটন ও তেল আবিব থেকে সমর্থন পাচ্ছেন রেজা পাহলাভি। কারণ ইসলামিক সরকারের পতন হলে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের কৌশলগত অবস্থান মজবুত হবে। সেই সাথে, অরাজকতা ও সরকার বিরোধী আন্দোলন ইসরায়েলের প্রত্যাশিত লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে রেজা পাহলাভির এই প্রচেষ্টাকে অনেকেই দেখছেন নতুন ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপ ও সম্ভাব্য অভ্যুত্থানের অংশ হিসেবে। সমালোচকদের মতে, তার ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা ইরানের ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির শাসনামলে ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। তেহরান ও তেল আবিবে দূতাবাস, তেলের চুক্তি এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা ছিল তখনকার বাস্তবতা। তবে ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর সম্পর্কের এই ধারা সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে মোড় নেয়। ইরান তখন ইসরায়েলকে ‘অবৈধ রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণা করে এবং ফিলিস্তিনকে সমর্থন দেয়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল চায় ইরানে সরকার পতনের পরিস্থিতি তৈরি হোক। শুক্রবারের ইসরায়েলি হামলা এবং ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া এক অজানা যাত্রায় দেশটিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে মরিয়া রেজা পাহলাভি নিজেকে ভবিষ্যৎ বিকল্প নেতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, ফ্রান্স২৪, জিউস নিউজ সিন্ডিকেট, দ্য জিউস ক্রোনিক্যাল, দ্য জেরুজালেম পোস্ট, টাইম.