যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই আলোচনাকে “ভালো ও ফলপ্রসূ” বলে অভিহিত করেছেন।
কী ঘটেছে?
মস্কোতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বৈঠক হয়। বৈঠকে উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতির বিষয়ে তথ্য বিনিময় করে এবং যুক্তরাষ্ট্র তাদের “সতর্ক আশাবাদ” প্রকাশ করে।
ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে শুক্রবার বলেন, “এই ভয়ানক, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষ হওয়ার এখন একটি সত্যিকারের ভালো সুযোগ তৈরি হয়েছে।”
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই আলোচনার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “রাশিয়া এখনো যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায় এবং প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধবিরতি চায় না।”
পুতিনের অবস্থান
বৃহস্পতিবার পুতিন বলেন, “যুদ্ধবিরতির ধারণা সঠিক এবং আমরা এটিকে সমর্থন করি… তবে কিছু জটিলতা রয়েছে।”
তবে এই “জটিলতা” কী, তা নিয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি। বরং তিনি এমন কিছু কঠোর শর্ত সামনে এনেছেন, যা জেলেনস্কির মতে “একটি কৌশলগত চাতুরী” and “কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করার একটি চেষ্টা”.
জেলেনস্কি একাধিক পোস্টে এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ লেখেন, “পুতিন এই যুদ্ধ শেষ করতে পারে না, কারণ তাহলে তার হাতে কিছুই থাকবে না।”
He also said, “পুতিন কূটনীতি ব্যর্থ করতে যা যা করা দরকার, সবই করছেন—অত্যন্ত কঠিন ও অগ্রহণযোগ্য শর্ত দিচ্ছেন, যুদ্ধবিরতির আগেই।”
ট্রাম্প তার পোস্টে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন “ইউক্রেনীয় সেনাদের জীবন রক্ষা করতে”, কারণ তারা এখন রুশ বাহিনীর দ্বারা “বেষ্টিত”।
এখন মূল প্রশ্ন হচ্ছে, রাশিয়া কি সত্যিই যুদ্ধবিরতি চায়, নাকি এটি কেবল “সময়ক্ষেপণের একটি কৌশল”? জেলেনস্কি মনে করছেন, রাশিয়া এখনো আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করার জন্যই কঠিন শর্ত দিচ্ছে।আপনার মত কী? রাশিয়া কি সত্যিই যুদ্ধবিরতিতে আগ্রহী, নাকি এটি তাদের রাজনৈতিক কৌশলেরই অংশ?
রাশিয়ার দাবি, কুর্স্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনারা “বিচ্ছিন্ন ও অবরুদ্ধ” এবং তারা বের হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী এ দাবিকে “মিথ্যা ও বানোয়াট” বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমাদের বাহিনী সফলভাবে নতুন প্রতিরক্ষা অবস্থানে চলে গেছে, এবং আমাদের ইউনিটগুলো ঘেরাওয়ের কোনো হুমকির মুখে নেই।”
মার্কিন প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক কূটনীতি
হোয়াইট হাউস বলছে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে “শান্তি আলোচনার এত কাছাকাছি আসার ঘটনা এর আগে ঘটেনি”.
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, “ট্রাম্প পুতিন এবং রাশিয়ার ওপর চাপ দিচ্ছেন যাতে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়।”
জার্মানি, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ জি-৭ দেশগুলোও যুদ্ধবিরতি চুক্তির পক্ষে রয়েছে। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি বলেন, “আমরা রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন করছি। এখন সিদ্ধান্ত রাশিয়ার হাতে।”
পুতিনের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের অনুরোধের জবাবে পুতিন বলেন, “যদি ইউক্রেনীয় সেনারা আত্মসমর্পণ করে, তাহলে তাদের আন্তর্জাতিক আইন ও রাশিয়ার আইন অনুযায়ী সম্মানের সঙ্গে রাখা হবে।”
তবে ইউক্রেন এই আশ্বাসকে “একটি চালাকি” বলে মনে করছে।
কূটনৈতিক ভবিষ্যৎ
জি-৭ দেশগুলো যুদ্ধবিরতির পক্ষে থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, “আমরা শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা সংবাদ সম্মেলনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব না।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এই যুদ্ধের সমাপ্তি হবে শুধুমাত্র একটি গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে।”