ইসরায়েলের গাজা অবরোধের প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া ক্যালাস ইইউ-ইসরায়েল মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন। গাজায় টানা ১১ দিন মানবিক সহায়তা আটকে রাখার ঘটনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
“এই মুহূর্তে আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত জীবন বাঁচানো,” বলেন ক্যালাস ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে। তিনি জানান, মানবিক সহায়তা অবরোধ তুলে নেওয়ার দায় ইসরায়েলের।
এর আগে, নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেল্ডক্যাম্প বিষয়টি আলোচনা প্রস্তাব করেন। একই দিনে যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের চলমান মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে।
গাজায় এখনো কোনো ত্রাণ বিতরণ হয়নি: জাতিসংঘ
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক জানান, আজ এখনো পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় কোনো ত্রাণ বিতরণ করা সম্ভব হয়নি, যদিও ইসরায়েলের বাণিজ্যিক সীমান্ত ক্রসিং কেরেম শালোম দিয়ে কিছু ত্রাণ পৌঁছেছে। “আমাদের একটি দল ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছে, কিন্তু অনুমতি না পাওয়ায় তারা খাদ্য ও পুষ্টিসামগ্রী সংগ্রহ করতে পারেনি,” বলেন তিনি।
১৪,০০০ শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি, সতর্কবার্তা জাতিসংঘের
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মুখপাত্র জেন্স লারকে জানান, গাজায় বর্তমানে প্রায় ১৪,১০০ শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে এবং দ্রুত সহায়তা না পৌঁছালে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তারা মারা যেতে পারে। এটি IPC (Integrated Food Security Phase Classification) এর পূর্বাভাসের উপর ভিত্তি করে জানানো হয়।
ক্ষুধায় কাতর শিশু, পানির জন্যও হাহাকার
৬০ বছর বয়সী ওয়াফা কাবলান জানান, “গতকাল কিছু খাইনি, তার আগের দিন শেষবার খেয়েছি। শিশুদের জন্য সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছে, হাঁটতেও পারছে না ঠিকমতো।” তার চার মাস বয়সী নাতির দুধ তৈরির জন্য পানি পর্যন্ত নেই।
যুক্তরাষ্ট্রে সেনেটে গাজা নিয়ে বিতর্ক
মার্কো রুবিও বলেন, ইসরায়েল মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে দেখে যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট। পাশাপাশি তিনি জানান, কিছু আরব রাষ্ট্রকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, যদি তারা স্বেচ্ছায় গাজার কিছু মানুষকে সাময়িকভাবে গ্রহণ করতে রাজি থাকে। রুবিও বলেন, “আমরা জানি হামাসের অস্তিত্ব ইসরায়েলের জন্য হুমকি।”
মাতৃত্বকালীন সংকটে গাজার নারী ও শিশু
গাজার একাধিক মা জানাচ্ছেন, তারা সন্তানদের ক্ষুধায় দিন দিন দুর্বল হয়ে যেতে দেখছেন। সাত মাসের এক শিশুর মা বলেন, “ও সবসময় ক্ষুধায় কাঁদে। ওর শরীর দুর্বল, ক্যালসিয়ামের ঘাটতিতে ভুগছে।” অন্য একজন জানান, তার বুকের দুধ বন্ধ হয়ে গেছে, আর ফর্মুলা মিল্ক কিনতে পারছেন না।
বন্দি উদ্ধারেই যুদ্ধ থামানোর আহ্বান
৭ অক্টোবর হামলায় নিহত তাল হাইমির আত্মীয় ইউদি গোরেন বলেন, চলমান সামরিক অভিযানে জীবিত বন্দিদের জীবন হুমকির মুখে। “চুক্তির মাধ্যমেই বন্দিদের ফেরানো সম্ভব, প্রমাণ হয়ে গেছে। এটা শুধু বন্দিদের না, গাজার মানুষের জীবন বাঁচানোর বিষয়ও,” বলেন তিনি।