যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি সমর্থনে একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের প্রস্তাবকে “শুধু একটি ভঙ্গি” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ।
প্রো-ট্রাম্প সাংবাদিক টাকার কার্লসনের সাথে এক সাক্ষাৎকারে উইটকফ বলেন, স্টারমার ও অন্যান্য ইউরোপীয় নেতারা “আমাদের সবাইকে উইনস্টন চার্চিলের মতো হতে হবে”—এই সরল ধারণার ওপর ভিত্তি করেই এ ধরনের পরিকল্পনা করছেন।
তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রশংসা করে বলেন, “আমি পুতিনকে খারাপ ব্যক্তি বলে মনে করি না। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান।”
রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনা ও উইটকফের বক্তব্য
উইটকফ, যিনি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনা পরিচালনা করছেন, তিনি ১০ দিন আগে পুতিনের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি জানান, পুতিন খুবই “সৌজন্যপূর্ণ” ও “খোলামেলা” ছিলেন এবং তিনি ট্রাম্পের জন্য একটি প্রতিকৃতি উপহার হিসেবে অর্ডার দিয়েছেন, যা ট্রাম্পকে স্পষ্টতই আবেগপ্রবণ করেছিল।
তবে, এই আলোচনার সময় উইটকফ ইউক্রেন যুদ্ধের কিছু বিতর্কিত ও ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছেন। তিনি দাবি করেছেন—
- ইউক্রেনীয় সেনারা কুরস্কে অবরুদ্ধ, যদিও ইউক্রেন সরকার এটি অস্বীকার করেছে এবং কোনো উন্মুক্ত সূত্র থেকেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
- রাশিয়া অধিকৃত অঞ্চলে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে “অধিকাংশ মানুষ রাশিয়ার শাসন মেনে নিতে চেয়েছে”, যদিও এই গণভোটগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয় এবং ব্যাপকভাবে বিতর্কিত।
- তিনি ইউক্রেনের পাঁচটি আংশিকভাবে দখলকৃত অঞ্চলের নাম বলতে পারেননি, যা হলো: লুহানস্ক, দোনেস্ক, জাপোরিঝঝিয়া, খেরসন ও ক্রিমিয়া।
উইটকফ আরও দাবি করেন যে, রাশিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে এই অঞ্চলগুলো এখন রাশিয়ার অংশ এবং বিশ্ব কবে নাগাদ এটি স্বীকার করবে, সেই প্রশ্নও তোলেন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা ও বর্তমান পরিস্থিতি
রাশিয়া গত কয়েক দিনে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যেখানে তিনজন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে একটি পাঁচ বছর বয়সী শিশুও ছিল।
শুক্রবার, রাশিয়া দক্ষিণ ইউক্রেনের জাপোরিঝঝিয়াতে হামলা চালিয়ে একটি পরিবারের তিন সদস্যকে হত্যা করেছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনের ৫৯টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি ক্রিমিয়াতেও ছিল—যা ২০১৪ সালে রাশিয়া অবৈধভাবে দখল করেছিল।
স্টারমারের পরিকল্পনার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের প্রস্তাবিত “ইচ্ছুক দেশগুলোর জোট” গঠন করে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনাকে উইটকফ খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, “এটি শুধুমাত্র একটি ভঙ্গি এবং সরলীকৃত চিন্তাভাবনার প্রতিফলন। রাশিয়া ইউরোপ দখল করতে চলেছে, এই ধারণা হাস্যকর। আমাদের তো ন্যাটো রয়েছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ছিল না।”
উইটকফ আরও বলেন, “আমরা একটি ব্ল্যাক সি যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নের কাছাকাছি রয়েছি এবং পুরো ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্যও আমরা খুব বেশি দূরে নেই।”
তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প চায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করুক এবং “আর্কটিকে জ্বালানি নীতি সমন্বয় করুক, সমুদ্রপথ ভাগাভাগি করুক, ইউরোপে একসঙ্গে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস পাঠাক, এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়েও সহযোগিতা করুক।”