৩৫ কোটি বছরের পুরনো এক অজানা মাছের জীবাশ্ম আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হলো জলজ প্রাণীদের বিবর্তনের ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়। কানাডার নোভা স্কোশিয়ার ব্লু বিচ অঞ্চলে ২০১৫ সালে এক নদীর ধারে দাঁতযুক্ত একটি বাঁকানো চোয়াল খুঁজে পান ব্লু বিচ ফসিল মিউজিয়ামের দুই গবেষক। পরে দীর্ঘ গবেষণায় জানা যায়, এটি ছিল প্রায় এক মিটার লম্বা এক বিশালাকৃতির প্রাচীন মাছের অংশ, যার অস্তিত্ব ছিল অন্যান্য দৈত্যাকার মৎস্যপ্রজাতির সঙ্গে। এই চোয়ালে সামনের দিকে ছিল ফাঁকা, বাঁকানো দাঁত এবং পেছনের দিকে ছিল ধারালো কাঁটা—যা শিকার ধরতে এবং ছিঁড়ে খেতে উপযোগী ছিল। বিজ্ঞানীরা জানান, মাছটি ছিল অত্যন্ত দক্ষ শিকারি এবং খাদ্য ধরার জন্য এর চোয়াল ছিল বিশেষভাবে অভিযোজিত।
গত আট বছর ধরে প্যালিওন্টোলজিস্ট জেসন অ্যান্ডারসনের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল ব্লু বিচ অঞ্চলে গবেষণা চালাচ্ছেন। তাদের মূল গবেষণার ক্ষেত্র ছিল টেট্রাপড, অর্থাৎ সেই চতুষ্পদ প্রাণীরা যারা প্রথমবার স্থলভাগে উঠে আসে। তবে এই নতুন জীবাশ্মের আবিষ্কার গবেষণার গতি ঘুরিয়ে দেয়, কারণ এটি ছিল অ্যাক্টিনপটেরিজিয়ান, অর্থাৎ রে-ফিন্ড মাছ—যারা আজকের অধিকাংশ মাছের পূর্বপুরুষ। আধুনিক সময়ের রে-ফিন্ড মাছ যেমন টুনা ও স্টারজন, তাদের বিবর্তনের শিকড় ছুঁয়ে যায় এই আবিষ্কারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিনটি প্রধান মেরুদণ্ডী গোষ্ঠী—হাঙরের মতো কর্টিলাজিনাস মাছ, লোব-ফিন্ড মাছ ও রে-ফিন্ড মাছ—প্রায় ৩৫ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। তবে ডেভোনিয়ান যুগের শেষদিকে ঘটে যাওয়া এক গণবিলুপ্তির ফলে প্রচুর প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং তারপর শুরু হয় আধুনিক মেরুদণ্ডী প্রাণীদের বিকাশ। ব্লু বিচ অঞ্চলের জীবাশ্মগুলো সেই রূপান্তরকালীন সময়ের দুর্লভ প্রমাণ।
নতুন এই প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে Sphyragnathus tyche। গবেষকরা বলছেন, এই প্রজাতির দাঁতের গঠন এতটাই অনন্য যে একে একটি সম্পূর্ণ নতুন গণ ও প্রজাতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর পেছনের দাঁতগুলো ছিল শিকারকে ছিদ্র করে ভেতরের অংশ খাওয়ার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এই বৈশিষ্ট্য দেখে ধারণা করা হচ্ছে, এটি ছিল প্রথম শিকার বিদ্ধ করে খাওয়া অভিযোজিত রে-ফিন্ড মাছ।
যদিও এখন পর্যন্ত মাছটির কেবল চোয়ালই আবিষ্কৃত হয়েছে, কিন্তু এর চলাচল বা পূর্ণদেহের গঠন সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া গেলে আধুনিক মাছের বিবর্তন সম্পর্কে আরও সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। তারপরও এই জীবাশ্ম আবিষ্কার প্যালিওন্টোলজি তথা জীবাশ্মবিদ্যার ক্ষেত্রে একটি বড় অর্জন এবং প্রাচীন প্রাণীজগতের বিস্ময়কর ইতিহাসের আরেকটি জানালা উন্মোচন করে দিয়েছে।