Faridpur Correspondent
মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া
নিউক্লিয়ার বোমা বা পারমাণবিক অস্ত্র আধুনিক সভ্যতার সবচেয়ে ভয়ংকর আবিষ্কারগুলোর একটি। এর বিস্ফোরণের ফলে তাৎক্ষণিকভাবে লক্ষাধিক প্রাণহানি তো হয়ই, পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি তেজস্ক্রিয়তা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে গ্রাস করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণের ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই কেন্দ্রবিন্দুর তাপমাত্রা এক থেকে কয়েক মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। এতে আশপাশের মানুষ, গাছপালা, যানবাহনসহ সব কিছু মুহূর্তে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
শকওয়েভ বা বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট তীব্র শব্দ ও চাপে কংক্রিটের দালান পর্যন্ত ধসে পড়ে। কাছাকাছি অবস্থানরত মানুষদের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বিস্ফোরণের পরপরই আশপাশের প্রাণীকুলকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। গামা রে ও নিউট্রনের প্রবাহের ফলে দেখা দেয় Radiation sickness—বমি, রক্তপাত, কোষ ধ্বংস এবং কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে।
এছাড়া বিস্ফোরণের ফলে তৈরি হয় মাশরুম-আকৃতির ধোঁয়ার স্তম্ভ, যেটি আকাশে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত উঠে যায়। দূর থেকে এটি এক ভয়ঙ্কর দৃশ্যের জন্ম দেয়।
দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের দিক থেকে, হিরোশিমা, নাগাসাকি এবং চেরনোবিলের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে—এই তেজস্ক্রিয়তা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষের মধ্যে ক্যান্সার, জন্মগত ত্রুটি ও বন্ধ্যাত্বসহ ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে।
চেরনোবিল দুর্ঘটনার পর ইউক্রেনে ৩০ কিলোমিটার এলাকা এক্সক্লুশন জোন ঘোষণা করা হয়, যেখানে আজও সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। বিশেষজ্ঞদের মতে, হাইড্রোজেন বোমা ব্যবহৃত হলে কোনো একটি অঞ্চল ৫০০ থেকে ১০০০ বছর পর্যন্ত মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়তে পারে।
বিশ্বজুড়ে চলমান পারমাণবিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এই ধ্বংসযজ্ঞের পরিণতি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে আসছেন। নিউক্লিয়ার যুদ্ধ শুরু হলে শুধু একটি দেশ নয়, গোটা মানবজাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে পারে।