যুদ্ধবিমানগুলির বিবর্তন এবং তাদের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন প্রজন্মের যুদ্ধবিমানগুলি তাদের বিশেষত্ব, ক্ষমতা এবং প্রযুক্তির কারণে উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেছে। এখানে আমরা তুলে ধরেছি বিশ্বের সবচেয়ে আইকনিক যুদ্ধবিমানগুলোর তালিকা, যা ১ম প্রজন্ম থেকে ৫ম প্রজন্ম পর্যন্ত বিস্তৃত।
৫ম প্রজন্ম (Stealth Technology, Advanced Avionics)

এই প্রজন্মের যুদ্ধবিমানগুলি অত্যন্ত উন্নত স্টেলথ প্রযুক্তি, আধুনিক এভিওনিক্স (avionics), এবং নতুন ডিজাইনের মাধ্যমে শত্রুর চোখ থেকে আত্মগোপন হতে সক্ষম। এগুলি সর্বাধিক মারাত্মক এবং আধুনিক যুদ্ধবিমান।
- 🇺🇸 F-22 Raptor (যুক্তরাষ্ট্র)
F-22 র্যাপটর বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্টেলথ ফাইটার। এটি অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তি ও গতির কারণে যুদ্ধের ময়দানে শত্রু বিমানগুলির সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম। - 🇺🇸 F-35 Lightning II (যুক্তরাষ্ট্র)
F-35 একটি একক আসন বিশিষ্ট স্টেলথ যুদ্ধবিমান, যা সর্বাধিক সেকেন্ডারি মিশন এবং আক্রমণাত্মক সক্ষমতার জন্য পরিচিত। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বহুমুখী যুদ্ধবিমানগুলির মধ্যে অন্যতম। - 🇷🇺 Su-57 Felon (রাশিয়া)
রাশিয়ার Su-57 ফিলন, এটি একটি স্টেলথ ফাইটার যা ৫ম প্রজন্মের প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এর অত্যাধুনিক সেন্সর এবং সুপারক্রুজ ক্ষমতা এটি একটি শক্তিশালী আক্রমণাত্মক বিমান করে তুলেছে। - 🇨🇳 Chengdu J-20 (চীন)
চীনের J-20 স্টেলথ বিমানটি আধুনিক প্রযুক্তি এবং উচ্চ গতির আক্রমণ ক্ষমতা দ্বারা চীনকে একটি শক্তিশালী বিমানবাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। - 🇰🇷 KF-21 Boramae (দক্ষিণ কোরিয়া)
KF-21 একটি ৪.৫ থেকে ৫ প্রজন্মের ফাইটার যা দক্ষিণ কোরিয়া উন্নয়ন করছে। এটি অত্যাধুনিক সেন্সর এবং স্টেলথ প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা এটিকে উন্নত যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রস্তুত করে। - 🇹🇷 TF Kaan (T-FX) (তুরস্ক)
তুরস্কের এই নতুন প্রজন্মের ফাইটার বিমানটি এখনও উন্নয়নাধীন, তবে এটি স্টেলথ প্রযুক্তি এবং অত্যাধুনিক বৈশিষ্ট্য সম্বলিত হবে।
৪.৫ প্রজন্ম (Highly Upgraded 4th Gen)
এই প্রজন্মের বিমানগুলিতে ৪র্থ প্রজন্মের প্রযুক্তি সন্নিবেশিত করা হয়েছে, তবে উন্নত সেন্সর, এভিওনিক্স এবং শক্তিশালী পাওয়ার প্ল্যান্টের মাধ্যমে এগুলি কার্যক্ষমতায় ৫ম প্রজন্মের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
- 🇫🇷 Rafale (ফ্রান্স)
ফ্রান্সের রাফেল ফাইটার বিমানটি অত্যন্ত বহুমুখী এবং বিমান বাহিনীতে আক্রমণ, প্রতিরক্ষা ও নজরদারির জন্য ব্যবহৃত হয়। - 🇸🇪 JAS 39 Gripen (সুইডেন)
JAS 39 গ্রিপেন একটি শক্তিশালী এবং বহুমুখী ফাইটার বিমান, যা সুইডেনের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ব্যবহৃত হয়। এটি কম্প্যাক্ট ডিজাইন এবং শক্তিশালী পারফরম্যান্সের জন্য পরিচিত। - 🇮🇳 HAL Tejas Mk1A / Mk2 (ভারত)
ভারতের HAL Tejas একটি লাইট সিঙ্গল-এঙ্গেল ফাইটার বিমান, যা উন্নত মিশন ক্ষমতা এবং স্টেলথ প্রযুক্তি সহ উন্নত বৈশিষ্ট্য সরবরাহ করে। - 🇨🇳 J-10C (চীন)
J-10C একটি মাল্টি-রোল ফাইটার, যা উন্নত সেন্সর এবং অত্যাধুনিক কমব্যাট ক্ষমতা সহ চীনকে আধুনিক বিমান বাহিনী প্রদান করেছে। - 🇯🇵 Mitsubishi F-2 (জাপান)
এটি একটি মাল্টি-রোল ফাইটার বিমান যা মূলত ফ-16 ফাইটারের উপর ভিত্তি করে তৈরি, কিন্তু এটি উন্নত সেন্সর ও কমব্যাট প্রযুক্তি নিয়ে আসে। - 🇩🇪 Eurofighter Typhoon (ইউরোপীয় কনসোর্টিয়াম)
ইউরোপের চারটি দেশ (জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন) যৌথভাবে এই বিমানটি তৈরি করেছে, যা অত্যন্ত শক্তিশালী এবং বহুমুখী ফাইটার বিমান হিসেবে পরিচিত।
৪র্থ প্রজন্ম (Fourth Generation)
এই প্রজন্মের বিমানগুলি প্রযুক্তিগতভাবে অত্যন্ত দক্ষ, শক্তিশালী এবং তাদের সময়ের সেরা বিমান ছিল। তারা এখনও বিশ্বের কিছু দেশের বিমান বাহিনীতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
- 🇺🇸 F-15 Eagle / F-16 Fighting Falcon (যুক্তরাষ্ট্র)
F-15 এবং F-16 যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম আইকনিক যুদ্ধবিমান। F-15 তার সুপারসনিক ক্ষমতা এবং বহুমুখী দক্ষতার জন্য পরিচিত, আর F-16 একক আসনে অত্যন্ত দক্ষ বিমান। - 🇷🇺 Su-27 / Su-30 / MiG-29 (রাশিয়া)
রাশিয়ার Su-27 এবং MiG-29 বিমানগুলি অত্যন্ত শক্তিশালী এবং উচ্চ ক্ষমতার আক্রমণাত্মক বিমানের জন্য সুপরিচিত। - 🇮🇱 IAI Kfir (ইসরায়েল)
IAI Kfir একটি মাল্টি-রোল ফাইটার, যা ইসরায়েলি বিমান বাহিনীতে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং তা অত্যন্ত দ্রুত এবং শক্তিশালী। - 🇵🇰 JF-17 Thunder (পাকিস্তান ও চীন যৌথভাবে)
পাকিস্তান এবং চীনের যৌথ উদ্যোগে তৈরি JF-17 থান্ডার একটি অত্যন্ত দক্ষ যুদ্ধবিমান, যা পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে ব্যবহৃত হয়। - 🇨🇳 J-11 / J-16 (চীন)
J-11 এবং J-16 বিমানগুলি চীনের সশস্ত্র বাহিনীতে ব্যবহৃত হয় এবং এগুলি শক্তিশালী আক্রমণ এবং প্রতিরক্ষা ক্ষমতা সহ অত্যন্ত আধুনিক।
৩য় প্রজন্ম (Cold War Era, Supersonic Jets)
এই প্রজন্মের বিমানগুলি একে অপরের সঙ্গে তুলনা করে তৈরি হয়েছিল এবং সেগুলি সুপারসনিক গতির সাথে প্রথমবারের মতো শত্রু বিমানগুলির বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড়িয়েছিল।
- 🇫🇷 Mirage 2000 (ফ্রান্স)
Mirage 2000 ফ্রান্সের একটি সিঙ্গেল-এঙ্গেল সুপারসনিক ফাইটার বিমান যা দক্ষতা এবং দ্রুতগতির জন্য পরিচিত। - 🇬🇧 Harrier Jump Jet (যুক্তরাজ্য)
হারিয়ার একটি লঞ্চ এবং ল্যান্ডিং স্টল ফাইটার, যা অত্যন্ত শক্তিশালী এবং বাহ্যিক আক্রমণ ক্ষমতা নিয়ে তৈরি। - 🇺🇸 F-14 Tomcat / F-4 Phantom II (যুক্তরাষ্ট্র)
F-14 টমক্যাট ও F-4 ফ্যানটম II এর মত যুদ্ধবিমানগুলো ছিল এক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর প্রধান শক্তি। - 🇷🇺 MiG-23 / MiG-25 (রাশিয়া)
রাশিয়ার MiG সিরিজের যুদ্ধবিমানগুলি এক সময় সুপারসনিক আক্রমণ সক্ষমতার জন্য সুপরিচিত ছিল। - 🇮🇳 MiG-21 Bison (ভারত)
ভারতের MiG-21 Bison একটি অত্যন্ত পুরানো বিমান হলেও তা এখনও কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে ভারতীয় বিমান বাহিনীতে।
ক্লাসিক ও কিংবদন্তি (ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ)
এই যুদ্ধবিমানগুলি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্যবহৃত হয়েছিল এবং তারা বিশ্ব ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
- 🇩🇪 Messerschmitt Bf 109 (জার্মানি)
WWII-তে জার্মানির Messerschmitt Bf 109 ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী একটি বিমা, যা Luftwaffe-এর প্রধান যুদ্ধবিমান ছিল। - 🇯🇵 Mitsubishi Zero (জাপান)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানী বিমান Mitsubishi Zero ছিল এক সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সুপারসনিক প্রতিপক্ষ। - 🇺🇸 P-51 Mustang (যুক্তরাষ্ট্র)
যুক্তরাষ্ট্রের P-51 Mustang ছিল WWII-এর সবচেয়ে সফল এবং কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এক ফাইটার বিমান। - 🇬🇧 Spitfire (যুক্তরাজ্য)
WWII-তে যুক্তরাজ্যের Spitfire বিমানটি ছিল প্রধান বিমান যা একাধিক সফল মিশনে অংশগ্রহণ করে। - 🇷🇺 MiG-15 (রাশিয়া)
Korean War-এর সময় রাশিয়ার MiG-15 বিমানটি এক ধরনের বিপ্লবী যুদ্ধবিমান ছিল যা বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে।