Satyajit Das:
” হোলি বা দোল ” ভারতের সবচেয়ে প্রাণবন্ত এবং আনন্দময় উৎসবগুলির মধ্যে একটি। এটি শুধু রঙের উৎসব নয়, বরং ধর্ম, ভক্তি ও ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত এক আধ্যাত্মিক উদযাপন। বিশেষ করে ভারতের ঐতিহাসিক মন্দিরগুলোতে হোলি উদযাপনকে কেন্দ্র করে এক বিশেষ পরিবেশ সৃষ্টি হয়, যেখানে ধর্মীয় রীতিনীতি, ভজন এবং শোভাযাত্রা মিশে যায় এক অনন্য অভিজ্ঞতায়।
এমন কিছু মন্দির রয়েছে যেখানে হোলি উদযাপন হয় অত্যন্ত ব্যাপকভাবে,যেগুলোতে ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র লীলা ও ধর্মীয় আবেগের মধ্য দিয়ে উৎসবের আনন্দে মাতিয়ে তোলে।
ভারতের মন্দিরে হোলি উদযাপনঃ
শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির (মথুরা):-
মথুরা, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থান, হোলির অন্যতম বৃহৎ উদযাপনের কেন্দ্র। এখানে ভক্তিমূলক ভজন, ধর্মীয় রীতি এবং বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে পুরো শহর এক আধ্যাত্মিক পরিবেশে রঙিন হয়ে ওঠে।
দ্বারকা ইস্কন মন্দির (দিল্লি):-
দিল্লির দ্বারকা ইস্কন মন্দিরে হোলি উদযাপনটি ভক্তির পাশাপাশি আধ্যাত্মিক উচ্ছ্বাসে পূর্ণ। এখানে ভগবান কৃষ্ণের কীর্তন,আরতি এবং হোলির তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা হয়।
দ্বারকাধীশ মন্দির (দ্বারকা):-
দ্বারকাধীশ মন্দিরে হোলি উদযাপনের সময় ভক্তরা কৃষ্ণের জীবনের লীলা অভিনয়ের মাধ্যমে উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তোলে। বিশাল আরতির মাধ্যমে বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠানটি আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ।
রাধা রমণ মন্দির (বৃন্দাবন):-
বৃন্দাবনের রাধা রমণ মন্দিরে হোলি উদযাপন হয় শান্তিপূর্ণ ও ভক্তিমূলকভাবে। এখানে ফুলের হোলি এবং সুমধুর কীর্তনের মাধ্যমে ভক্তরা হোলির আনন্দে মেতে ওঠেন।
গোবিন্দ দেব জি মন্দির (জয়পুর):-
জয়পুরের গোবিন্দ দেব জি মন্দিরে ঐতিহ্যবাহী রাজস্থানি আড়ম্বরের সঙ্গে হোলি উদযাপন হয়। কৃষ্ণের জীবনের উপর ভিত্তি করে লোকনাট্য পরিবেশনা এবং গুলাল দিয়ে খেলা চলে।
শ্রীনাথজি মন্দির (নাথদ্বারা):-
নাথদ্বারার শ্রীনাথজি মন্দিরে হোলি উদযাপন রাজকীয় ও শৈল্পিকভাবে হয়। ফুলের হোলি এবং ছাড়ি হোলির মাধ্যমে ভক্তরা উৎসবের আনন্দ উপভোগ করেন।
জগন্নাথ মন্দির (পুরী):-
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে হোলি উৎসবকে দোল পূর্ণিমার দিন ব্যাপকভাবে উদযাপন করা হয়। ভক্তরা শুকনো রঙ দিয়ে হোলি খেলে এবং ভজন গেয়ে ভক্তি প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশের দোল পূর্ণিমা:-
বাংলাদেশেও দোল পূর্ণিমা বা হোলি উৎসব অত্যন্ত আনন্দময় এবং আধ্যাত্মিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করেন। দোল পূর্ণিমা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্মীয় রীতিনীতি, ভজন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলির মাধ্যমে উদযাপিত হয়।
দোল পূর্ণিমার দিন ভক্তরা প্রিয় দেবতা শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধার পুজা করেন। তারপরে একত্রিত হয়ে রঙ খেলেন,যা ঐতিহ্যগতভাবে ‘অবির’ (বর্ণের পাউডার) এবং ‘গোলাল’ দিয়ে করা হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী এবং অন্যান্য বড় শহরগুলিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটিতে মন্দিরে বিশেষ আরতির আয়োজন করেন। মন্দিরে রঙের উৎসব, কীর্তন এবং ভজন গান শোনা যায়।
ত্বকের সুরক্ষা:
এই উৎসবের আনন্দে যখন রঙে মেতে ওঠেন, তখন ত্বকের সুরক্ষার দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। রঙ বা আবিরের মধ্যে কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে,যা ত্বকে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই রঙ খেলার আগে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া সানস্ক্রিন ব্যবহার,ত্বকের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে উপকারী হতে পারে।
এই সমস্ত মন্দির এবং উৎসবগুলি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে,হোলি বা দোল শুধু একটি রঙের খেলা নয়। এটি ভক্তির,শান্তির এবং ঐতিহ্যের উদযাপন। এটি আমাদের একত্রিত করে,যাতে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি,শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জীবন কাটাতে পারি।