Satyajit Das:
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সমাজচিত্রে ধর্ম ও উৎসব যেন হয়ে উঠেছে একদল নির্ধারিত মানুষের আনুষ্ঠানিকতার প্রদর্শনী। বিশেষ করে হিন্দু ধর্মীয় উৎসবগুলোর আয়োজনে এখন “চাঁদা” নামক একটি অদৃশ্য অথচ বেদনা-ভরা শব্দ যুক্ত হয়ে গেছে। প্রশ্ন জাগে,প্রকৃতপক্ষে শাস্ত্র কি পূজার জন্য চাঁদা আদায়ের অনুমতি দেয়?
ধর্মের নামে বৈষয়িকতা—এক বাস্তব সংকট:
আজ বাংলাদেশের প্রতিটি পাড়া-মহল্লার পূজামণ্ডপে দেখা যায়,কে কত টাকা দিল,কে কত বড় ব্যানারে নাম তুললো,কে কত বেশি ‘ডেকোরেশন’ করলো—এই নিয়ে প্রতিযোগিতা। অথচ,আসল ত্যাগ বা ভক্তি কোথাও নেই। একজন হতদরিদ্র কৃষক বা দিনমজুরের ঘরে যখন সন্তানের মুখে দুমুঠো ভাত নেই,তখনও তার কাছ থেকে পূজার নামে চাঁদা আদায় করা হয়! এটা কি ধর্ম,না একধরনের সাংগঠনিক প্রহসন?
হিন্দু শাস্ত্র কী বলে ?
গরুড় পুরাণে বলা আছেঃ-
“দানের নামে কারো ওপর জোর প্রয়োগ করো না। যে স্বেচ্ছায় দেয়,তার দানই ভগবানের কাছে পৌঁছে।”
শিব পুরাণেও আছেঃ-
“যজ্ঞ বা পূজা করতে গিয়ে যদি কারো অন্তরে ক্লেশ তৈরি হয়,তবে সেই পূজা শিবপ্রীতি অর্জন করে না।”
বেদপুরাণ অনুযায়ীঃ-
“পবিত্রতা, ভক্তি ও নির্মল অন্তর—এই তিনই পূজার প্রকৃত ভিত্তি। বিত্ত নয়, চিত্তই মূল।”
তাহলে প্রশ্ন হলো—যে পূজায় গরীব মানুষ দুশ্চিন্তায় পড়ে,তা কীভাবে ঈশ্বর প্রাপ্তির সোপান হতে পারে?
বাংলাদেশের বাস্তবতা ও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন:
এই মুহূর্তে দেশের হিন্দু সমাজ যে সংকটময় সময় অতিক্রম করছে,তা পূজা নয়,পূজার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন করে ভাবার সময়। মন্দির-মণ্ডপে কোটি টাকার ব্যানার নয়,বরং দরিদ্র রামভক্তদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। আমাদের সমাজে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মতো শত শত রামভক্ত আজও বাড়িছাড়া, নিপীড়িত,নিঃস্ব। এদের পাশে না দাঁড়িয়ে কীভাবে রামনবমী উদযাপন হয়?
ধর্ম নয়,দায়বদ্ধতা হোক মুখ্য:
পূজার অর্থ উৎসব নয়,ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আত্মনিবেদন। আর যদি সেই আত্মনিবেদনের পথেই দাঁড়ায় চাঁদার নামে শোষণ,তবে সেটি ধর্ম নয়, সামাজিক অন্যায়।
সুতরাং,এবার থেকে শুরু হোক এক নতুন ধারা—যেখানে পূজা মানে অগণিত প্রদীপ নয়,একটি ক্ষুধার্ত মুখে অন্ন,একটি নিঃস্ব পরিবারে আশ্বাস, একটি প্রান্তিক রামভক্তের পাশে দাঁড়ানো।
হোক এই বার্তা;”শঙ্খধ্বনি-ধর্ম হৃদয়ে,চাঁদায় নয়”।