মোমিন মেহেদী
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক পূর্বাভাস:
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার লন্ডন বৈঠক বাংলাদেশ রাজনীতিতে এক সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে—তবে এর সুফল-অসুফল উভয়ই নির্ভর করবে আগামী বছরের শুরুতে ঘটে যাওয়া বাস্তবতার ওপর।
চার দিনের লন্ডন সফরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল ডরচেস্টার হোটেলে তাদের ৯০ মিনিটের গোপনীয় বৈঠক। যদিও সরকারিভাবে এটি ‘হারমোনি পুরস্কার’ গ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টার সফর হিসেবে পরিচিত ছিল, তবে রাজনৈতিক ভাষ্যে এটি পরিণত হয়েছে নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে সম্ভাব্য সমঝোতার মূল পর্বে।
এই বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময় নিয়ে নমনীয় অবস্থানের ইঙ্গিত এবং সংস্কার-প্রক্রিয়া চালিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি উঠে এসেছে। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকেও নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে ‘প্রস্তুতির সময়’ বিবেচনায় একটি সমন্বিত সময়সূচি প্রস্তাব করা হয়েছে।
আলোচনার প্রেক্ষাপট ও মূল বক্তব্য:
বৈঠকের মূল অর্জন বলে বিবেচিত হয়েছে — উভয় পক্ষই পরস্পরের কিছু দাবিকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে, যা একটি রাজনৈতিক সমঝোতার সূচনা হিসেবে দেখা যেতে পারে। নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় হিসেবে ২০২৬ সালের রমজানের আগের সপ্তাহকে বিবেচনা করা হচ্ছে, যদি সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি সন্তোষজনক হয়।
এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংস্কার ও বিচার একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা নির্বাচনের আগে ও পরে অব্যাহত থাকবে। এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে কিছুটা আশাবাদ তৈরি হলেও, সাধারণ মানুষ এখনো নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও প্রশাসনিক অস্থিরতায় উদ্বিগ্ন।
আলোচনায় গ্রেটা থুনবার্গের ছায়া:
তারেক রহমান উপহার দিয়েছেন পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের বই “No One is Too Small to Make a Difference”—এটি নিছক উপহার নয়, বরং একটি বার্তাবাহী রাজনৈতিক প্রতীক। বইটিতে জলবায়ু সংকটের মতো বিষয় নিয়ে সময়ক্ষেপণ না করার আহ্বান রয়েছে, যা বাংলাদেশে চলমান বিচার ও সংস্কার প্রসঙ্গে এক রূপক উপমা হিসেবে দেখা যেতে পারে।
প্রশ্ন যা থেকে যায়:
- এই বৈঠক যদি সত্যিই “সবাই জিতেছে” বলে বিবেচিত হয়, তাহলে জনগণ কী পেল?
- অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা কতখানি বজায় থাকবে?
- নির্বাচন কমিশন কীভাবে গ্রহণযোগ্য সময়সূচি নির্ধারণ করবে?
- দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার মতো অর্থনৈতিক সংকটকে কীভাবে রাজনৈতিক সমঝোতা মোকাবিলা করবে?
Conclusion:
বৈঠকের তাৎক্ষণিক ফল যতই আশাব্যঞ্জক হোক না কেন, বাংলাদেশ রাজনীতির ইতিহাস বলে—উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের চেয়ে এর বাস্তবায়নই আসল চাবিকাঠি। এখন দেখার বিষয়, এই আলোচনা কি হবে ভবিষ্যতের ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার পদক্ষেপ, নাকি অতীতের মতই আরেকটি অসমাপ্ত অধ্যায়?