নিজের বন্ধুকে ‘নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য’ হিসেবে পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে তার প্রেমিকাকে ‘সহানুভূতির ফাঁদে ফেলে’ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত যুবকের নাম ফয়সাল আহমেদ ওরফে দুর্জয় (২৪)। তিনি স্থানীয় একটি কলেজ শাখার ছাত্রদল নেতা ছিলেন। ঘটনার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে। এছাড়া সংগঠনের নীতিমালার গুরুতর লঙ্ঘন করায় তাকে ছাত্রদল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি।
ঘটনার পটভূমি
জানা গেছে, ফয়সাল ও তার বন্ধু ছিলেন দীর্ঘদিনের পরিচিত। সম্প্রতি রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। পুলিশি সূত্র বলছে, ফয়সাল পরিকল্পিতভাবে বন্ধুকে ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য’ বলে চিহ্নিত করে এবং তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এরই মধ্যে বন্ধুর প্রেমিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে ফয়সাল। প্রথমে বন্ধুর খোঁজ নিতে এসে ওই তরুণী ফয়সালের সাহায্য চেয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। ফয়সাল তার দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে মেয়েটির প্রতি সহানুভূতির ভান করে।
এর কিছুদিন পর ফয়সাল তরুণীকে আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান, যেখানে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ উঠে। ভুক্তভোগী তরুণী ঘটনার একপর্যায়ে পালিয়ে গিয়ে পরিবারকে বিস্তারিত জানালে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
আইনি পদক্ষেপ ও তদন্ত
ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়েরের পর পুলিশ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সোমবার রাতে ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে অভিযুক্ত ফয়সালকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আদালতে তোলা হলে তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন বিচারক।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং প্রতারণার মাধ্যমে বিশ্বাসভঙ্গের ধারায় মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে তরুণীর মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ‘‘এটি একটি পরিকল্পিত এবং ধোঁকাবাজির মাধ্যমে সংঘটিত যৌন সহিংসতা। ঘটনার পেছনে আরও কেউ জড়িত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
দলীয় প্রতিক্রিয়া
ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরই ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি এক বিবৃতিতে জানায়, “ফয়সাল আহমেদ ওরফে দুর্জয়ের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অত্যন্ত নিন্দনীয় ও লজ্জাজনক। এই অপকর্ম ছাত্রদলের নীতি, আদর্শ ও গণমানুষের স্বার্থবিরোধী। তাই তাকে অবিলম্বে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”
ছাত্রদলের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা বলেন, “যদি কেউ অপরাধ করে, সে যেই হোক না কেন, তার জন্য ছাত্রদলে কোনো জায়গা নেই। এই ঘটনায় আমরা বিব্রত।”
এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নেটিজেনদের অনেকে বলছেন, “একদিকে বন্ধুকে বিশ্বাসভঙ্গ করে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া, অন্যদিকে সেই বন্ধুর অসহায় প্রেমিকাকে ধোঁকা দিয়ে ধর্ষণ—এই ঘটনা শুধু অপরাধ নয়, মানবিকতারও চরম অবক্ষয়।”
নারী অধিকারকর্মী শাহীন আক্তার বলেন, “এ ধরনের ঘটনায় শুধু অপরাধ নয়, সামাজিক বিশ্বাস ও রাজনৈতিক আদর্শের মূল্যবোধও ভেঙে পড়ে। অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
পুলিশ জানিয়েছে, ফয়সালের মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে, যা তদন্তে সহায়তা করবে। ভুক্তভোগীর মানসিক সহায়তার জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পাশে দাঁড়িয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার তদন্ত চলমান রয়েছে এবং পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, প্রয়োজনে আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হতে পারে।