নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় ছাত্রদল নেতা মীর হোসেন ওরফে সাদ্দামের (৩১) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে একটি পরিত্যক্ত শৌচাগারের সেপটিক ট্যাংক থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সাদ্দাম ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাদ্দাম বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামের এক ব্যক্তির জানাজায় অংশ নিতে দোকান থেকে বের হন। সেদিন রাত ৯টার দিকে তিনি স্ত্রী সুবর্না আক্তারকে ফোন করে জানিয়েছিলেন, তাঁর ফিরতে দেরি হবে। এরপর সাদ্দামের ফোন বন্ধ হয়ে যায় এবং পরবর্তী দিনগুলোতে তিনি বাড়ি ফেরেননি। এ ঘটনায় সাদ্দামের পরিবার শুক্রবার বেগমগঞ্জ মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরবর্তী সময়ে, সাদ্দামের নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে তাঁর পরিবারসহ দলীয় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে তার খোঁজ চালান।
আজ সকালে দুর্গাপুর এলাকায় কয়েকজন শিশু আম কুড়াতে গিয়ে একটি সেপটিক ট্যাংকের ভেতর পলিথিনে মোড়ানো মরদেহ দেখতে পান। এরপর স্থানীয়রা পুলিশকে জানালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। সাদ্দামের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সাদ্দাম ছিল বেগমগঞ্জ উপজেলার সাত নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং রাজগঞ্জ বাজার পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক জিসানের দোকানে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর বড় ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন সোহেল জানান, সাদ্দামের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে পরিবার ও স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে তার খোঁজ করে। শুক্রবার রাতে সাদ্দামের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ছয়ানী এলাকায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মোটরসাইকেলটির আলামত জব্দ করে।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিটন দেওয়ান বলেন, “পুলিশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য বিভিন্ন দিক থেকে তদন্ত করছে।”
এ বিষয়ে স্থানীয় যুবদল নেতা মুরাদ জিয়াউর রহমান জানান, সাদ্দামের সাথে তার কোনো বিরোধ ছিল না এবং তাঁর এই হত্যাকাণ্ডের কোনো স্পষ্ট কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে পুলিশের ধারণা, পূর্বশত্রুতার কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) এমরান খাঁন জানান, “পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে পূর্বশত্রুতার কারণে সাদ্দামের মৃত্যু হতে পারে।” পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সকল দিক খতিয়ে দেখছে এবং দ্রুত হত্যাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে।
সাদ্দামের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার পর, এলাকায় আতঙ্ক এবং শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর পরিবার ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা এই ঘটনা দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন।