যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলির একটি রিপোর্ট অনুসারে, চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সামরিক এবং সাইবার হুমকি হিসেবে পরিচিত। মঙ্গলবার প্রকাশিত এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বেইজিং তার সামরিক সক্ষমতাগুলির মাধ্যমে তাইওয়ান দখল করার জন্য “মাঝারি কিন্তু অমসৃণ” অগ্রগতি করছে।
চীনের সামরিক ক্ষমতা
চীনের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের উপর আক্রমণ চালানোর জন্য বিভিন্ন প্রচলিত অস্ত্র রয়েছে, যা এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অবকাঠামো আক্রমণ করতে এবং তার মহাকাশ সম্পদ লক্ষ্যবস্তু করতে সক্ষম। এছাড়াও, চীন ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (AI) ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, চীনের “পিপলস লিবারেশন আর্মি” (PLA) বর্তমানে অত্যাধুনিক অস্ত্রগুলো ব্যবহার করতে সক্ষম, যার মধ্যে রয়েছে হাইপারসনিক মিসাইল, স্টেলথ বিমান, উন্নত সাবমেরিন, শক্তিশালী মহাকাশ এবং সাইবার যুদ্ধের সক্ষমতা এবং বৃহৎ পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ।
এছাড়াও, চীনের সামরিক বাহিনী ভবিষ্যতে বড় ভাষার মডেলগুলি ব্যবহার করতে পারে যা মিথ্যা খবর তৈরি, ব্যক্তিত্বের imitation এবং আক্রমণাত্মক নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য কাজে আসবে।
চীনের আক্রমণের লক্ষ্য: তাইওয়ান
চীন বর্তমানে তাইওয়ানকে নিজের অংশ হিসেবে দাবি করছে এবং তাইওয়ান দখল করতে চীনের সামরিক বাহিনী ধারাবাহিকভাবে উন্নত সামরিক সক্ষমতা অর্জন করছে। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে PLA সম্ভবত এমন কিছু সক্ষমতা অর্জন করছে যা চীনকে তাইওয়ান দখল করতে এবং প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপ প্রতিহত করতে সাহায্য করবে। তবে, চীনকে কিছু অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি, জনসংখ্যাগত ভারসাম্যের অভাব, এবং অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি যা চীনের শাসক কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরীণ বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
চীন তার সাইবার ক্ষমতাগুলিও দ্রুত উন্নত করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পরিকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করতে সক্ষম। রিপোর্টে বলা হয়েছে, চীনের সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য এবং প্রযুক্তি অবকাঠামো বিপন্ন হতে পারে। এটি শুধু একটি সামরিক হুমকি নয়, বরং চীনের জগৎজুড়ে অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত প্রভাব বিস্তারের একটি কৌশলও হতে পারে।
চীনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি
চীন তার অর্থনীতি ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ছে, এবং দেশটির ভোক্তা এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা কমে যাচ্ছে। এমনকি আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও চীনের বিরোধিতা বাড়ছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে। রিপোর্ট অনুযায়ী, চীনের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আগামী বছরগুলিতে আরও ধীর হতে পারে এবং চীন আরো অর্থনৈতিক চাপের সম্মুখীন হতে পারে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসায়িক টানাপোড়েনের কারণে।
চীন আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িত, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের প্রবাহে সহায়ক হিসেবে। যদিও চীন এর মোকাবিলায় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তবে তার আন্তঃদেশীয় ব্যবসার কারণে এ ব্যাপারে চীনের ইচ্ছাশক্তি দুর্বল বলে মনে হচ্ছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চীন ফেন্টানিল সংশ্লিষ্ট রাসায়নিক উপাদানগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে, তবে তা এখনও সীমিত।
এমতাবস্থায়, চীন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রধান সামরিক এবং সাইবার হুমকি হিসেবে উঠছে এবং তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে কৌশলগত মহড়া অব্যাহত রেখেছে। যদিও দেশটি অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জর্জরিত, তবে চীনের সামরিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নতির দিকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলির নজর থাকা জরুরি। এর পাশাপাশি, চীন বিশ্বে নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করছে, যা যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশগুলোর জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
এভাবে, চীনের সামরিক, সাইবার, এবং অর্থনৈতিক শক্তির উপর নজর রাখা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।