কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের জন্য ঋণ গ্রহণের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে দেশের আর্থিক বিশেষজ্ঞরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ২৭ মার্চ এই পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়, যেখানে বলা হয়েছে, মোদী সরকার আগামী অর্থবর্ষে (২০২৫-২০২৬) দেশের বাজার থেকে ১৪.৮২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিবে, যার মধ্যে প্রথমার্ধে প্রায় ৮ লক্ষ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এই বিপুল অঙ্কের ঋণ গ্রহণের ঘোষণা সরকারের আর্থিক পরিস্থিতির প্রতি নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঋণ নেওয়ার ফলে ভারতের আর্থিক অবস্থা পাকিস্তানের মতো হতে পারে, যেখানে ঋণের পরিমাণ অত্যধিক বেড়ে গিয়ে দেশে একাধিক অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে। ভারতের অর্থনৈতিক ঘাটতি যদি এইভাবে বাড়তে থাকে, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন দেশের জিডিপির (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) ৪.৪ শতাংশ রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে। চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২০২৫) এই ঘাটতি ৪.৮ শতাংশ হতে পারে, যা আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই ঋণ সংগ্রহের বড় অংশ সোভারেন গ্রিন বন্ডের মাধ্যমে আসবে। সরকার জানিয়েছে, পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের জন্য এই বন্ডে ১০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। সোভারেন গ্রিন বন্ডগুলো ২৬টি সাপ্তাহিক নিলামের মাধ্যমে বাজার থেকে সংগ্রহ করা হবে, এবং এই বন্ডের মেয়াদ তিন থেকে ৫০ বছরের মধ্যে থাকবে। বিভিন্ন মেয়াদের জন্য সরকার নির্দিষ্ট সুদের হার ঘোষণা করেছে, যেমন তিন বছরের বন্ডে ৫.৩ শতাংশ সুদ, পাঁচ বছরের বন্ডে ১১.৩ শতাংশ, এবং ১০ বছরের বন্ডে ২৬.২ শতাংশ সুদ দেয়া হবে।
এছাড়াও, সরকারের আয়ের উৎসের মধ্যে থাকবে ট্রেজারি বিল, যা প্রতি সপ্তাহে ১৯ হাজার কোটি টাকার তিনটি পৃথক মেয়াদে জারি হবে। এর মধ্যে ৯১ দিনের ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ৯ হাজার কোটি টাকা, ১৮২ দিনের বিলের মাধ্যমে ৫ হাজার কোটি টাকা এবং ৩৬৪ দিনের ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে আরও ৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে।
রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) গত ফেব্রুয়ারি মাসে সংসদে দেওয়া বাজেটে সরকারের তরফে যে ঋণ সংগ্রহের পরিকল্পনা ছিল, তা বাস্তবায়ন করতে এগিয়ে এসেছে। তারা ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের প্রথমার্ধে ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধের জন্য সীমা নির্ধারণ করেছে। এটির মাধ্যমে সরকারের আর্থিক অসঙ্গতি সামাল দিতে সহায়তা হবে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ জানিয়েছেন যে, ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের মোট আয়ের পরিমাণ ৩৪.৯৬ লক্ষ কোটি টাকা হতে পারে, আর মোট খরচের পরিমাণ হবে ৫০.৬৫ লক্ষ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণের পরিমাণ বাদ দিয়ে, সরকারের খরচে ব্যাপক বৃদ্ধি দেখা যাবে। সরকারের রাজস্ব ঘাটতি পূরণে পুরনো সিকিউরিটিজের মাধ্যমে ১১.৫৪ লক্ষ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে, এবং বাকি টাকা স্বল্প সঞ্চয় ও অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া যাবে।
এদিকে, সরকারের এই ঋণ গ্রহণ পরিকল্পনা নিয়ে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। সমালোচকরা অভিযোগ করছেন, এটি ভারতের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে এবং ভবিষ্যতে এর প্রভাব বিশাল হতে পারে, যেমন পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুরবস্থা হয়েছে।
তবে সরকার এর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি, এটি স্থিতিশীলতার দিকে একধাপ এগিয়ে যেতে চাইছে। আগামী দিনে সরকারের পরিকল্পনা এবং জনগণের উপর তার প্রভাব কী হবে, তা দেখার জন্য পর্যবেক্ষকরা অপেক্ষা করছেন।