প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫ | স্থান: মাসকাট, ওমান
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের প্রতিনিধিদল ওমানের রাজধানী মাসকাটে বসেছে বহু প্রত্যাশিত পারমাণবিক আলোচনা করতে, যা মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদী উত্তেজনার মধ্যে শান্তির একটি সম্ভাব্য দ্বার খুলে দিতে পারে। দুই দেশের সম্পর্ক অতীতে বহুবার চূড়ান্ত সংকটের মুখে পড়েছে, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই আলোচনা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আশার আলো জ্বেলেছে।
ওমানের রাজধানী মাসকাটে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত করার পর এ আলোচনাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ এই মাত্রার সমৃদ্ধকরণ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট বলে মনে করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। ইরানের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, আলোচনা হবে সরাসরি, কিন্তু ইরান বলছে তারা ওমানের মধ্যস্থতায় পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
আলোচনার উদ্দেশ্য হলো—ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করা এবং এর পরিবর্তে তাদের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা। তেহরান বলছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চায় না, বরং দীর্ঘমেয়াদী নিষেধাজ্ঞা তাদের জনগণের ওপর মানবিক সংকট তৈরি করছে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, যদি আলোচনায় কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হয়, তাহলে তিনি সামরিক পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবেন না। তাঁর ভাষ্য, “চুক্তি না হলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এই মন্তব্যে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইরানের অবস্থান অনুযায়ী, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ, এবং আইএএইএ’র (IAEA) পরিদর্শক দল নিয়মিতভাবে এটি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইরানের বক্তব্য নিয়ে সন্দিহান এবং মনে করছে—ইরান গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশ যদি একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে, তাহলে শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতেও এর বড় প্রভাব পড়বে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে যদি আলোচনা ভেঙে যায়, তাহলে যুদ্ধের সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায়, ওমান বর্তমানে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরান উভয় পক্ষই জানিয়েছে—তারা আলোচনায় ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে অংশ নিচ্ছে, তবে বাস্তব অগ্রগতি নির্ভর করছে পারস্পরিক ছাড় ও আস্থার ওপর।