আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সম্প্রতি ইসরায়েলি বাহিনীর বড় পরিসরের বিমান হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইয়েমেনের হুথি নিয়ন্ত্রিত সামরিক বাহিনী নিজেদের তৈরি অত্যাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রকাশ করেছে, যা ইসরায়েলকে বড় ধাক্কা দিয়েছে।
এসব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এতটাই কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে যে, হামলায় অংশ নেওয়া অনেক ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
ইরানি বার্তা সংস্থা মেহের নিউজের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, হুথি বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদের মাধ্যমে ইসরায়েলি বিমান প্রতিহত করে, যার ফলে ইসরায়েলি কৌশলবিদদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
হুথি মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি জানান, ইসরায়েলি জেটগুলো ইয়েমেনের আকাশসীমায় প্রবেশের চেষ্টা করলে, ইয়েমেনের স্বনির্ভরভাবে তৈরি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তাদের লক্ষ্য করে ভয়াবহ গোলাবর্ষণ শুরু করে। ফলে বহু যুদ্ধবিমান মাঝপথ থেকেই পিছু হটে।
ফিলিস্তিনের পক্ষে লড়াইয়ের ঘোষণা দেওয়া হুথিরা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একাধিকবার দখলীকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। তারা বলছে, যতক্ষণ না গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ হয়, ততক্ষণ তাদের প্রতিরোধ চলবে।
এছাড়া, ইয়েমেনি জলসীমা হয়ে ইসরায়েলের স্বার্থে চলাচলকারী জাহাজগুলোকেও হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে তারা। এর মাধ্যমে হুথিরা লোহিত সাগর ও বাব আল-মান্দেব প্রণালীর বাণিজ্যিক নিরাপত্তায় বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
ফলে, ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতির জবাবে ইসরায়েল হুদেইদা বন্দর, রাস ইসা এবং একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে পাল্টা হামলা চালায়। তবে হামলাকারী যুদ্ধবিমানগুলোকেও মুখোমুখি হতে হয় ইয়েমেনি আকাশ প্রতিরক্ষার কড়া প্রতিরোধের।
পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, হুথিরা গোপন ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গগুলোতে নিজেদের অস্ত্র উৎপাদন করে আসছে এবং তারা অনেকখানিই প্রযুক্তিগতভাবে স্বনির্ভর।
বিশ্লেষকদের মতে, ইয়েমেনের এই প্রতিরোধ ক্ষমতা শুধু ইসরায়েল নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা সামরিক বলয়ের জন্যও একটি নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
এই প্রতিরক্ষা সক্ষমতা সামরিক ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক ও কৌশলগত ভারসাম্যেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ নামে পরিচিত গোষ্ঠীগুলো যে এখনো অনেক কৌশলগত ‘তাস’ ধরে রেখেছে—ইয়েমেনের সাম্প্রতিক অভিযানে তার ইঙ্গিত স্পষ্ট।