জয়পুরহাট প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পাঁচগ্রাম জান্নাতুল নূরী ১৯৮১ সালে স্থাপিত দাখিল মাদ্রাসার এবারের দাখিল পরীক্ষার ফলাফলে কেউই উত্তীর্ণ হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির ২১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই অকৃতকার্য হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই প্রকাশিত ফলাফলের পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে, যা নিয়ে স্থানীয় অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট মহলে চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারের দাখিল পরীক্ষায় কালাই উপজেলার ২০টি মাদ্রাসা থেকে মোট ৪৫৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ১৫২ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। উপজেলায় গড় পাশের হার ৩৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
মাদ্রাসার সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, “এমন রহস্যজনক ফল এর আগে কোনোবার হয়নি।
আমরা শিক্ষা বোর্ডে ফল যাচাইয়ের উদ্যোগ নেব।”
বিজয় মিজানসহ একাধিক শিক্ষার্থী খোব প্রকাশ করে বলেন, “আমরা সৎভাবে পরীক্ষা দিয়েছি, কোনো অনিয়ম করিনি। শিক্ষকরা যদি নিয়মিত ক্লাস নিতেন, আমাদের দেখভাল করতেন, তাহলে এমন ফল হতো না।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, মাদ্রাসার অধিকাংশ শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তারা নিয়মিতভাবে ক্লাসে উপস্থিত থাকেন না, পাঠদানের দায়িত্ব পালন তো দূরের কথা। শিক্ষকরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মাদ্রাসাকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। ফলে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সময় না দেওয়ায় এবারের দাখিল পরীক্ষায় আমাদের সন্তানেরা শতভাগ ফেল করেছে।
এ অবস্থায় অভিভাবকরা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুরোধ করেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হোক। যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো শিক্ষার্থী এভাবে অবহেলার শিকার না হয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দেশের জন্য গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে পারে।
শিক্ষা অনুরাগী মনিরুল ইসলাম বলেন৷ এই ধরনের ফলাফল শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের নয়, পুরো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাঠামো, মনিটরিং ও শিক্ষকের দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে। নিয়মিত পাঠদান, শিক্ষকের উপস্থিতি, ছাত্রদের একাডেমিক সহায়তা ও মূল্যায়নের স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হলে, এই ধরনের ব্যর্থতা বারবার ঘটবে।
স্থানীয় প্রশাসন এবং শিক্ষা বোর্ডের উচিত এই ঘটনাকে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে নিয়ে একটি স্বচ্ছ ও কার্যকর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় সংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “শতভাগ ফেল হওয়া অস্বাভাবিক। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা আক্তার জাহান বলেন, “এমন ফলাফলের কারণ খুঁজতে মাদ্রাসার সুপার ও পরিচালনা কমিটির সঙ্গে বসা হবে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”