জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ:
সারাদেশের মতো নওগাঁ জেলাতেও কোরবানির পশুর চামড়ার সরকারি নির্ধারিত মূল্য মাঠ পর্যায়ে কার্যত মানা হচ্ছে না। জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও গ্রামীণ এলাকায় গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। ছোট গরুর চামড়ার দাম আরও কম। গত শনিবার (৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহার দিন নওগাঁ জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
উকিলপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল হামিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দেড় লাখ টাকার গরু কোরবানি দিয়েছি, আর চামড়ার দাম বলছে ৫০০ টাকা! সরকার তো দাম নির্ধারণ করেছে, কিন্তুকিনবে তো মাঠ পর্যায়ের লোকজন। তারা যদি দাম না দেয়, আমরা করবো কী?”
তার প্রতিবেশী রাইসুল বলেন, “গরিবের হকের এই চামড়ায় যদি সরকার নজরদারি করতো, তাহলে এমন দুর্দশা হতো না। সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে, ক্রেতারা তার অর্ধেকও দিতে রাজি না।”
মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের সেকেন্দার আলী বলেন, “চামড়া কেউ নিতে আসেনি, শেষ পর্যন্ত মাটিতেই পুঁতে ফেলেছি।”
চামড়া ব্যবসায়ী রাবিষ্ণুদাস জানান, “এবার আমি নয়টি চামড়া কিনেছি। দাম ৪০০, ৫৫০ এবং ৬০০ টাকার মধ্যে। ছোট হলে ৫০০ টাকার বেশি দিইনি। এগুলো দেলুয়াবাড়ি হাটে নিয়ে বিক্রি করবো। একটু দরকষাকষি করলে কিছু লাভ থাকে, তবে বড় মুনাফা নেই।” তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার যেমন চামড়ার বাজার শেষ করেছে, বর্তমান সরকারও কিছু ভালো করছে না।”
মাঠ পর্যায়ের এক রাজনৈতিক পরিচয়ধারী চামড়া ক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “সরকারি দামে যদি কিনি, তাহলে লাভ কোথায়? যারে যত দিয়ে পারছি, নিচ্ছি। আশা করছি দুই-তিন হাজার চামড়া কিনে বিভিন্ন হাটে বিক্রি করতে পারবো। সারাদিন পরিশ্রম করি, সংসারও তো চালাতে হয়।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চামড়া ব্যবসায়ী নেতা বলেন, “একসময় এই চামড়া ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি হতো। এখন সেই বাজার নেই, দাম পড়ে গেছে।”
এদিকে, কালোবাজারি রোধে প্রশাসন তৎপর বলে জানিয়েছেন নওগাঁ জেলা পুলিশ সুপারের দপ্তরের এক সূত্র। সূত্রটি জানায়, “চামড়া যাতে অবৈধভাবে পাচার বা কালোবাজারে না যায়, সেজন্য পুলিশ মাঠ পর্যায়ে সজাগ রয়েছে।”