বিজিএমইএর নেতৃত্বে আসতে চায় এমন একটি জোট যারা শুধু পদ-পদবির জন্য নয়, বরং পুরো পোশাক শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রস্তুত। ফোরামের প্যানেল লিডার মাহমুদ হাসান খান বাবুর নেতৃত্বে রোববার (১১ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে তারা তুলে ধরেন নিজেদের ৯ দফা অগ্রাধিকারমূলক কর্মপরিকল্পনা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিজিএমইএ যেন সরকারের সঙ্গে সত্যিকার অর্থে মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করতে পারে, সেজন্য প্রয়োজন কার্যকর, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নেতৃত্ব। ফোরামের নেতারা মনে করেন, পোশাক শিল্পের বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে সংগঠনটির ভেতর থেকেই পরিবর্তন আনতে হবে।
মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, “বিজিএমইএতে একটি গোষ্ঠীর একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে প্রকৃত উদ্যোক্তারা উপেক্ষিত হয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, এই নির্বাচন হবে পরিবর্তনের সুযোগ। বিজিএমইএ হবে মালিকদের আস্থার প্রতীক, কোনো দলের কার্যালয় নয়।”
তিনি আরও বলেন, পোশাক খাতের বৃহৎ অবদান থাকা সত্ত্বেও এখনো এটি টেকসইভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফোরাম এ অবস্থান পাল্টাতে চায়। তারা চান, খাতটির উন্নয়নের জন্য আলাদা একটি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠিত হোক।
সংগঠনের নির্বাচনি প্যানেল থেকে ৩৫ জন পরিচালক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়। তরুণ, উদ্যমী ও ব্যবসার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন উদ্যোক্তাদের বেছে নেওয়া হয়েছে, যারা সংগঠনের উন্নয়ন ও সদস্যদের স্বার্থ রক্ষায় সচেষ্ট থাকবেন।
প্রস্তাবিত ৯ দফা কর্মপরিকল্পনায় রয়েছে—
- পোশাক খাতের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা
- এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য নীতিগত সহায়তা
- ব্যাংক ও কাস্টমস হয়রানি নিরসন
- রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনরুদ্ধারে বিশেষ নীতি সহায়তা
- অনিয়ন্ত্রিত কারণে রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানের জন্য এক্সিট পলিসি
- অঞ্চলভিত্তিক ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেল
- পরিচালক পর্যায়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ
- দলীয় প্রভাবমুক্ত স্বচ্ছ পরিচালনা ব্যবস্থা
- সংগঠনের সদস্যপদ প্রদান ও মনিটরিংয়ে কঠোর মানদণ্ড
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফোরামের মহাসচিব ড. রশিদ আহমেদ হোসাইনী, প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক ফয়সাল সামাদসহ অন্য প্রার্থীরা।
নেতারা অভিযোগ করেন, পূর্ববর্তী সময়গুলোতে অনেক মালিক সংগঠন থেকে কাঙ্ক্ষিত সহায়তা পাননি, উল্টো হয়েছেন হয়রানির শিকার। কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি দেন— নতুন নেতৃত্বে বিজিএমইএ হবে এমন একটি সংগঠন, যেখানে মালিক-শ্রমিক সবাই সম্মান পাবে এবং রাজনৈতিক প্রভাব থাকবে না।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, “বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী বলা ঠিক নয়। তবে আমরা চাই বিজিএমইএর নেতৃত্বে কেউ যেন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকেন।”
তিনি আরও বলেন, বিগত দিনে সদস্যপদ দেওয়ার ক্ষেত্রে মানদণ্ড উপেক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু ফোরাম নেতৃত্বে এলে সেটি আর হবে না। কারণ, একটি কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটলে পুরো খাত তার দায়ভার নেয়।
শেষ পর্যন্ত, এই নির্বাচনের মাধ্যমে বিজিএমইএর ভবিষ্যৎ নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।