মুজাহিদুল ইসলাম,জবি প্রতিনিধি :
বিগত কয়েক বছর থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। যার পরিপেক্ষিতে স্পেনের সিমাগো ইনস্টিটিউশন র্যাংকিং ২০২২ এ রসায়ন গবেষণায় বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে জবির রসায়ন বিভাগ।
গত একবছরে ১২ জন শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য স্কলারশিপ অর্জন করেন এরমধ্যে ৯ জনই পেয়েছেন ফুল ফান্ডিং স্কলারশিপ। এরমধ্যে আমেরিকা থেকে ৭ জন এবং সৌদি আরব থেকে পেয়েছেন দুজন ফুল ফান্ডিং স্কলারশিপ।
যুক্তরাষ্ট্রে স্কলারশিপ পাওয়া সাত জনের চারজনই ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তারা হলেন প্রতীতি সাহা ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা টুইন সিটিজ , রিভা আক্তার ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান অ্যান আর্বার , রিজওয়ানা আমিন শীতল ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া, জুনায়েদ মাহমুদ শুভ ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটি এছাড়াও ১১তম ব্যাচ থেকে দুজন এবং ১০ম ব্যাচ থেকে একজন পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে স্কলারশিপ।
এছাড়াও ১২তম ব্যাচের আব্দুল কাবির হোসেন ও ফাহিমা ফেরদৌস নাহিন আছেন সৌদির কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অব পেট্রোলিয়াম এন্ড মিনারেলসে। এটি বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় এবং কিউএস রেংকিংয়ে বিশ্বের ৬৭তম র্যাংকিংয়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এছাড়া মোহাম্মদ রুবেল আছেন দক্ষিণ কোরিয়ার দেগু ইউনিভার্সিটিতে, সাব্বির আহমেদ আছেন অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব উলনগংয়ে, রজৎ চক্রবর্তী আছেন ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব হাল এ।
উল্লেখ্য ১২তম ব্যাচ থেকে একসাথে অনার্স শেষ করেছেন মাত্র ৩৯ জন এরমধ্যে ৯জনেই গত একবছরে বিদেশে স্কলারশিপ পেয়ে যান
১১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা হলো রৌশন আলম ও শান্তা ইসলাম। বর্তমানে রৌশন আলম যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ম্যাক্সিকো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে আছেন এবং শান্তা ইসলাম আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ায়। এছাড়াও ১০ ব্যাচের আবু নাঈম আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ায়।
ফুল ফান্ডিং পাওয়া ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রতীতি সাহা একই সাথে আটটা ইউনিভার্সিটি থেকে ফুল ফান্ডিং স্কলারশিপ পান অবশেষে ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা টুইন সিটিজ চয়েজ করেন উনি জুনিয়র শিক্ষার্থীদের নিয়ে বলেন, “বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য নিজেকে প্যাকেজ হিসেবে ভাবতে হবে। অনার্সের শুরু থেকেই সিজিপিএ ভালো রাখাটা খুব জরুরী। এটা অবশ্যই প্লাস পয়েন্ট, কিন্তু সেটা যদি কখনও কম হয়, সেক্ষেত্রে চেষ্টা করতে হবে নিজের সাবজেক্ট অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট রিসার্চ ইন্টারেস্ট খুঁজে বের করা ও একটু একটু করে রিসার্চ এর জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করা। আর শিক্ষকদের ও সিনিয়রদের পরামর্শ নিয়ে একটু স্ট্রেটিজি অনুসরণ করলে সাফল্য পাওয়া সম্ভব”
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব হালে এআই এন্ড ডাটা সাইন্সে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী রজত চক্রবর্তী বলেন, ” লাইফে চড়াই উতরাই স্ট্রাগল আসবেই, ওই স্ট্রাগল পিরিয়ড পার করতে হবে, এই চড়াই উতরাই গুলাই আমাদের জীবনে নিজেদের চিনিয়ে দিয়ে যায়, কিন্তু নিজের স্বপ্ন আর শখ এই দুইয়ের উপর কখনোই হাল ছাড়া যাবে না।”
ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার শীতল জুনিয়র শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বলেন,” সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিৎ যেনো সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জন করা যায়, আর অবশ্যই ভালো রিসার্চ ওয়ার্ক করতে হবে এটা ম্যান্ডাটরি। নিজের জন্য খুব ভালো সিভি ও এসওপি তৈরী করতে হবে। আর শিক্ষকদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে কারন উচ্চ শিক্ষার জন্য ওনারাই রিকমেন্ডেশন লেটার দিবেন ”
কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অব পেট্রোলিয়াম এন্ড মিনারেলসে স্কলারশিপ পাওয়া শিক্ষার্থী ফাহিমা ফেরদাউস নাহিন বলেন,” উচ্চশিক্ষার প্রতি যাদের আগ্রহ তাদের প্রথম থেকেই রেজাল্টের দিকে দৃষ্টিপাত করা উচিত, সেই সঙ্গে ইংরেজি দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এডিশনাল প্রিপারেশন গুলো নিয়ে রাখা ভালো। আর রিসার্চ এক্সপেরিয়েন্স এন্ড পাব্লিকেশন গুলোও অনেক হেল্পফুল হবে পরবর্তীতে। লাইফে অনেক আপ্স এন্ড ডাউন্স থাকবেই, তারপরেও সিরিয়াসলি পড়াশুনা, হার্ড ওয়্যার্ক করে যেতে হবে, এবং পাশাপাশি ভালো নিয়্যাত রাখতে হবে ইনশাআল্লাহ”
সৌদির কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অব পেট্রোলিয়াম এন্ড মিনারেলসে স্কলারশিপ পাওয়া শিক্ষার্থী আব্দুল কাবির হোসেন বলেন,”যাদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার ইচ্ছা রয়েছে তাদের ভার্সিটি লাইফের শুরু থেকেই নিজের সিজিপিএ এর প্রতি বেশি জোর দিতে হবে। মধ্যপ্রাচ্চে উচ্চশিক্ষার জন্য মনোনীত হতে হলে সিজিপিএ 3.60+ রাখতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে চান্স পাবার জন্য এত সিজিপিএ এর দরকার হয় না যেটা মধ্যপ্রাচ্চে লাগে। তাই যাদের সিজিপিএ কম তারা হতাশ না হয়ে ইউরোপ অথবা আমেরিকার ইউনিভার্সিটি গুলোতে চেষ্টা করা উচিত।
আর অবশ্যই রিসার্চ এর কাজটা অনার্স এর প্রথম দিক থেকেই শুরু করা উচিত যদিও আমাদের রসায়ন বিভাগে সেই সুযোগ টা এখনও নেই তবে আমাদের দেশের ইন্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি গুলোতে এ ধরনের সুযোগ রয়েছে। সৌদি আরবের স্কুল শিক্ষার্থীরাও এখন বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে আর যারা অনার্স এ লেখাপড়া করছে তারা রিসার্চ এর ক্ষেত্রেও বেশ দক্ষ। আমি এই নিউজ এর মাধ্যমে আমাদের ডিপার্টমেন্ট এর চেয়ারম্যান স্যার সহ সকল শিক্ষকগণকে কে অনুরোধ করতে চাই, আমাদের জুনিয়র যারা আছে তারা যেন অনার্স এর শুরু থেকেই গবেষণা কাজের সুযোগ পায় এ বিষয় টা যথাযথ গুরুত্বের সাথে দেখার জন্য।”