Staff Correspondent :
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন গত বছরের ৫ আগস্টের পর ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল রাজধানীতে পুরনো আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নিজের ‘সেভেন স্টার গ্রুপ’ নামে পরিচিত সন্ত্রাসী বাহিনী পুনর্গঠন করা। এ লক্ষ্যে তিনি নতুন সদস্য সংগ্রহ এবং অস্ত্র মজুদের কাজ শুরু করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় দায়ের করা এক অস্ত্র মামলার অভিযোগপত্রে এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম.
অস্ত্র কিনতে কুষ্টিয়ায় গা ঢাকা
অভিযোগপত্রে বলা হয়, কালোবাজারে অস্ত্রের দাম বেশি হওয়ায় সুব্রত বাইন সীমান্তবর্তী কুষ্টিয়া জেলায় অবস্থান নেন, যাতে কম দামে অস্ত্র সংগ্রহ করতে পারেন। সেখানে তাঁর সহযোগী হিসেবে যোগ দেন আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ.
গত ২৭ মে ভোরে কুষ্টিয়ায় অভিযান চালিয়ে সেনাবাহিনী তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
হাতিরঝিলে গোপন বৈঠক ও অস্ত্র মজুদ
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, ঢাকার হাতিরঝিল এলাকায় সহযোগী এস এম শরীফের বাসায় নিয়মিত বৈঠক করতেন তারা। পুলিশ জানতে পারে, ওই বাসায় রাখা ছিল তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র ও অপরাধ সংগঠনের সরঞ্জাম।
সেদিন বিকেলেই হাতিরঝিল থানাধীন নতুন রাস্তা এলাকা থেকে শরীফ ও আরেক সহযোগী আরাফাত ইবনে নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়:
- ৫টি বিদেশি পিস্তল
- ১০টি ম্যাগাজিন
- ৫৩ রাউন্ড গুলি
- একটি স্যাটেলাইট ফোন
পরদিন এসআই আসাদুজ্জামান হাতিরঝিল থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেন।
অস্ত্র ছিল বিদেশি, গুলি ছিল তাজা
তদন্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন,
“গ্রেপ্তারের সময় আসামিদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তদন্তে দেখা যায়, বিদেশি এসব পিস্তলের দাম অনেক বেশি এবং গুলিগুলো ছিল কার্যক্ষম ও তাজা। দেশে ফিরে সুব্রতের লক্ষ্যই ছিল অস্ত্র সংগ্রহ।”
সন্ত্রাসী সুব্রত: পুরনো ইতিহাস
২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদসহ ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর একটি তালিকা প্রকাশ করে, যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
সে সময় সুব্রত ও মাসুদ পরিচালিত সেভেন স্টার গ্রুপ রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে যুক্ত ছিল।
তালিকা প্রকাশের পর সুব্রত ভারতে পালিয়ে যান এবং দীর্ঘ প্রায় দুই দশক সেখানেই আত্মগোপনে ছিলেন।
বিচারের জন্য মামলাটি দায়রা জজ আদালতে
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান অভিযোগপত্র গ্রহণ করে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ দিয়েছেন। মামলায় ১৩ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারা অনুযায়ী।
আইনজীবীর সাড়া মেলেনি
সুব্রত বাইনের আইনজীবী বাদল মিয়ার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।