অ আ আবীর আকাশ :
বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে একজন জেলা প্রশাসক। কিন্তু খুব কম সংখ্যক মানুষই নিজেকে সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশা, সমস্যার সমাধান ও স্বপ্নের অংশীদার করে তুলতে সক্ষম হন। লক্ষ্মীপুর জেলার বর্তমান জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার এমনই একজন ব্যতিক্রমী প্রশাসক, যিনি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মানবিকতা, শিক্ষা, সহানুভূতি ও সমাজ পরিবর্তনের আদর্শ নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর নেতৃত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি ও বাস্তবমুখী কর্মধারা লক্ষ্মীপুরবাসীর হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে।
গণশুনানিতে জনগণের মুখোমুখি
প্রতি বুধবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় গণশুনানি। এই দিনটি শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং এটি হয়ে উঠেছে প্রান্তিক মানুষের আশার বাতিঘর। রাজীব কুমার সরকার এ দিন নিজে সরাসরি জনগণের কথা শুনেন, মনোযোগ দিয়ে মানুষের দুঃখ বেদনা অনুধাবন করেন, সমস্যা বুঝেন এবং তৎপরতার সঙ্গে সমাধানের পদক্ষেপ নেন। বহু মানুষ যেখানে জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়ে আশাহত হয়ে ফিরে আসেন, সেখানে জেলা প্রশাসকের দরজায় এসে ফিরে যান না কেউই।
তাঁর শুনানি কক্ষ যেন সাধারণ মানুষের সমস্যা নিয়ে আসার জন্য উন্মুক্ত এক আদালত। কৃষক, দিনমজুর, গৃহবধূ, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি থেকে শুরু করে ভিক্ষুক পর্যন্ত সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁর কাছে আসেন নিজেদের সমস্যার কথা বলতে। রাজীব কুমার সরকার শুধু শোনেনই না, সমস্যা অনুভব করেন—আর সেখান থেকেই সৃষ্টি হয় তাঁর ব্যতিক্রমী মানবিক উদ্ভাবন।
দুঃস্থ, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো
রাজীব কুমার সরকার কোনো মানুষকে তাঁর কষ্ট নিয়ে ফেরত পাঠান না। কারো চিকিৎসার জন্য অর্থ দরকার, কেউ সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেন না, কারো বিয়ের খরচ জোগাড় হচ্ছে না—এমন যে কোনো পরিস্থিতিতে তিনি তাৎক্ষণিক অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করেন। তাঁর এই উদার দানশীলতা কোনো প্রচারমূলক কর্মকাণ্ড নয়; বরং নিঃস্বার্থ মানবসেবারই প্রতিফলন।
তাঁর দেয়া সাহায্যে চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়েছেন অনেক অসুস্থ মানুষ, পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পেরেছেন দরিদ্র শিক্ষার্থীরা, বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পেরেছেন অনেক পরিবার। এইভাবে প্রতিদিন নতুন নতুন জীবনের গল্প রচনা করছেন রাজীব কুমার সরকার—যা একজন জেলা প্রশাসকের দায়িত্বের বাইরের বিষয় হলেও, মানবিকতা তাঁর কর্মের কেন্দ্রে থাকার কারণে তিনি এগুলো করেছেন পরম মমতায়।
সমস্যা সমাধানে বাস্তবমুখী উদ্যোগ
গণশুনানিতে পাওয়া সমস্যাগুলোর তাৎক্ষণিক সমাধানযোগ্য অংশ তিনি নিজেই সমাধান করেন। যেমন—ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ, সামাজিক জটিলতা, পারিবারিক কলহ, নির্যাতনের অভিযোগ, অবৈধ দখল ইত্যাদি। অন্যদিকে, যেসব সমস্যার জন্য সময় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহায়তা প্রয়োজন, তিনি তা দ্রুত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেন এবং পরবর্তীতে এর অগ্রগতি নিজে তদারকি করেন।
জেলা প্রশাসক হিসেবে তিনি নিজেকে একটি সেবাপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মনে করেন—এবং জনগণকে গ্রাহক নয়, নিজের পরিবারের সদস্য মনে করে দায়িত্ব পালন করেন। এর ফলেই লক্ষ্মীপুরে তার প্রতি মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। অনেকে বলেন, “রাজীব স্যার আমাদের আপনজনের চেয়েও আপন।”
সামাজিক সহমর্মিতা ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা
সমাজে সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সম্প্রীতির পরিবেশ তৈরি করা আজকের বাংলাদেশে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজে সহমর্মিতা ও মানবিক মূল্যবোধ ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
তিনি সব সময় বলেন, “সমস্যা যত না বড়, সমাধান তার চেয়েও সহজ—যদি আমরা একে অপরকে সম্মান করতে শিখি।” তাঁর এই আহ্বান শুধু প্রশাসনের পক্ষ থেকে নয়; বরং এটি একজন বিবেকবান মানুষের সমাজ রচনার আহ্বান।
গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার দূরদর্শী চিন্তা
রাজীব কুমার সরকার শুধু আজকের সমস্যার সমাধান নিয়েই ব্যস্ত নন; তিনি আগামী প্রজন্মের জন্য একটি আলোকিত সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার ৫টি উপজেলায় এবং ৩৬টি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গণগ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
এই গ্রন্থাগারগুলোতে প্রতিদিন শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষ বই পড়তে আসে। এতে জেলায় পাঠাভ্যাস বেড়েছে, জ্ঞানের জগতে মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বইয়ের মাধ্যমে তিনি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে চান—যা সমাজ পরিবর্তনের অন্যতম হাতিয়ার।
লেখক, গবেষক ও চিন্তাবিদ হিসেবে অবদান
রাজীব কুমার সরকার একজন প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলামিস্ট হিসেবেও সুপরিচিত। তিনি সমাজ, প্রশাসন, শিক্ষা ও মানবিকতার বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখালেখি করেন এবং তার লেখায় যেমন গভীর অন্তর্দৃষ্টি থাকে, তেমনি সমাধানের দিকনির্দেশনাও থাকে। বহু গ্রন্থের রচয়িতা হিসেবে তাঁর পরিচিতি তাঁকে একটি জ্ঞাননির্ভর প্রশাসক হিসেবে আলাদা মর্যাদা দেয়।
প্রশাসনের পাশাপাশি একজন চিন্তাবিদ হিসেবে তিনি যে সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করছেন, তা তাঁকে সাধারণ প্রশাসকের চেয়ে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তিনি বারবার বলেন, “পদ নয়, মানুষকে ভালোবাসাই বড় দায়িত্ব।”
জমিজমা ও আইনি জটিলতার মানবিক নিষ্পত্তি
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি জটিলতা জমিজমা সংক্রান্ত। এই সমস্যা নিয়ে প্রতিদিনই শত শত মানুষ প্রশাসনের কাছে আসেন। রাজীব কুমার সরকার নিজে এই সমস্যাগুলোর গভীরে গিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেন। অনেক সময় তিনি নিজে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে গিয়ে তদারকি করেন। অনেক পরিবার তাঁর হস্তক্ষেপে বংশ পরম্পরার জমি ফিরে পেয়েছে, অনেক মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে।
করোনা ও দুর্যোগকালে সাহসী নেতৃত্ব
করোনা মহামারি ও ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন দুর্যোগকালে রাজীব কুমার সরকার এক সাহসী, ত্যাগী ও মানবিক প্রশাসকের চেহারায় সামনে আসেন। তিনি নিজের নিরাপত্তার কথা না ভেবে জেলার প্রতিটি গ্রামে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেন। যখন মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পেত, তখন তিনি ছিলেন মাঠে, সাধারণ মানুষের পাশে।
সম্মান, ভালোবাসা ও মানুষের হৃদয়ে স্থান
একজন প্রকৃত নেতা মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেন—রাজীব কুমার সরকার ঠিক তা-ই করেছেন। লক্ষ্মীপুর জেলার প্রতিটি মানুষের মুখে তাঁর প্রশংসা। কেউ তাঁকে “মানবতার ফেরিওয়ালা” বলেন, কেউ “আলোকিত মানুষ”, কেউবা “প্রশাসনের কবি”।
তাঁর এই অসাধারণ নেতৃত্ব, আন্তরিকতা ও উদারতা শুধু একজন সফল জেলা প্রশাসকের চিত্র নয়; বরং এটি একজন দায়িত্বশীল, শিক্ষিত, মানবিক ও দূরদর্শী রাষ্ট্রকর্মকের প্রকৃত প্রতিচ্ছবি।
Conclusion
লক্ষ্মীপুর জেলার জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার শুধু একজন সরকারি কর্মকর্তা নন; তিনি হচ্ছেন লক্ষ্মীপুরবাসীর আশা, নির্ভরতা ও পরিবর্তনের প্রতীক। তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা, মানবিক মূল্যবোধ, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং সংস্কারমুখী পদক্ষেপ এ জেলার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
তিনি প্রমাণ করেছেন—একজন মানুষ চাইলে কতদূর বদলাতে পারেন চারপাশের সমাজ, মানুষ ও ভবিষ্যৎ। রাজীব কুমার সরকার শুধুই জেলা প্রশাসক নন, তিনি লক্ষ্মীপুরের আলোকবর্তিকা।
লেখক: কবি প্রাবন্ধিক কলামিস্ট ও সাংবাদিক