Staff Correspondent :
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।” তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মই এই পরিবর্তনের সূচনা করবে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত “সিভিল ডিসকোর্স ন্যাশনালস–২০২৫” বিতর্ক প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। আয়োজক ছিল ‘দ্য ভয়েস অব ডেমোক্রেসি রিথিংক বাংলাদেশ’।
‘আমি তোমার মতের সঙ্গে একমত নই, কিন্তু…’
গণতন্ত্রের মূল্যবোধ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন,
“কেউ যদি বলে ‘আমি তোমার সঙ্গে একমত নই’, আমি বলি—‘তোমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় আমি আমার প্রাণ পর্যন্ত দিতে রাজি আছি।’ এটাই লিবারেল ডেমোক্রেসির ভিত্তি।”
তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি সমাজ চাই, যেখানে ভিন্নমত থাকবে, বিতর্ক থাকবে, কিন্তু থাকবে সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ।”
‘মাননীয়’ শব্দেই জন্ম নেয় স্বৈরতন্ত্রের বীজ
সরকারি ভাষার আড়ালে লুকিয়ে থাকা শ্রেণি–বৈষম্য ও ক্ষমতার প্রদর্শনের সংস্কৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন,
“এই যে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’, ‘মাননীয় স্পিকার’—আমরা কি এই শব্দগুলো বাদ দিতে পারি না? এখান থেকেই যেন স্বৈরতন্ত্রের বীজ রোপণ হয়।”
এই বক্তব্যে মিলনায়তনে উপস্থিত শিক্ষার্থী ও তরুণদের মাঝে তুমুল করতালির সৃষ্টি হয়।
মন্ত্রী হলে ‘গার্ড অব অনার’ – সেই মানসিকতা বদলাতে হবে
নিজের মন্ত্রী থাকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন,
“ঢাকার বাইরে গেলে সার্কিট হাউসে চৌকস পুলিশ দল গার্ড অব অনার দিত। তখন মনে হতো, আমি যেন বিশাল কিছু। এই প্রটোকল, এই ভিআইপি সংস্কৃতি একজন মানুষকে ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়।”
তিনি বলেন, “ভারতে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিহারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মাত্র একজন দেহরক্ষী নিয়ে আমাদের দেখতে এসেছিলেন। সেই সরলতা আমাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। আমরা কি সেই সরলতায় ফিরতে পারি না?”
তরুণদের মধ্যে রাজনীতিচর্চার ঘাটতি উদ্বেগজনক
মির্জা ফখরুল তরুণদের রাজনীতি বিমুখতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,
“এক জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ১.৮৭ শতাংশ তরুণ রাজনীতিতে আগ্রহী। এটি দেশের জন্য বিপজ্জনক বার্তা। রাজনীতি থেকে নেতৃত্ব আসে, আর নেতৃত্বের হাতেই দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে।”
তিনি বলেন, “ঢাকা আর মফস্বলের মধ্যে যে দূরত্ব—তা ঘোচাতে না পারলে প্রকৃত রাজনৈতিক অগ্রগতি হবে না। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে এই বৈষম্য দূর করা জরুরি।”
‘আশা হারাবেন না’ — তরুণদের উদ্দেশে বার্তা
“সময়টা ভালো যাচ্ছে না, অনেকে হতাশ,”—বলে মির্জা ফখরুল বলেন, “তবে আমি আশাবাদী। কারণ আমি এই তরুণদের মধ্যে সম্ভাবনার আলো দেখি। তারা দেশ নিয়ে গভীরভাবে ভাবছে, সুন্দর আয়োজন করছে। ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আরও অনেকে
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ একেএম ইলিয়াস, বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু, বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ও এডকম হোল্ডিংসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম ফারহান চৌধুরী।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুই দিনব্যাপী এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের মোট ৬৪টি বিতর্ক দল অংশ নেয়।