বিধান মন্ডল, (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় গরু চুরির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নে গত কয়েক দিনে গরু চুরির হিড়িক পড়েছে। সংঘবদ্ধ চোরের দল রাতের আঁধারে গোয়াল থেকে গরু চুরি করে নিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষক ও খামারিরা। ইউনিয়নের চণ্ডীবরদী, চরবল্লভদী, খালিশা বল্লভদীসহ বিভিন্ন গ্রামে একের পর এক চুরির ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এলাকাবাসীর দাবি, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে শুধু চণ্ডীবরদী গ্রাম থেকেই ৬টি গরু চুরি হয়েছে। সর্বশেষ গতকার সোমবার রাতে ওই গ্রামের সেলিম শেখের গোয়াল থেকে তিনটি গরু চুরি হয়। ভুক্তভোগী সেলিম শেখ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “এই গরুর দুধ বিক্রি করেই আমার সংসার চলতো। সারাজীবনের জমানো টাকায় কেনা আমার এই তিনটি গরু। চোরেরা আমার সবকিছু কেড়ে নিয়ে আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। এখন আমি কী করব?
এর আগেও ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে একাধিক গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী মিলন চৌকিদার বলেন, কিছুদিন আগে আমার তিনটি গরু চুরি হয়েছে। চোরের দল আমাকে একেবারে সর্বস্বান্ত ও নিঃস্ব করে দিয়ে গেছে। এই তিনটি গরু ছাড়া আমার আর কোনো সম্বল ছিল না।
একইভাবে কয়েক মাস আগে চণ্ডীবরদী গ্রামের শাজাহান সরদারের তিনটি গরু, পিলি মুন্সির একটি গাভী ও চরবল্লভদী গ্রামের হাসেম মোল্লার দুটি গরু চুরি হয়। বারবার চুরির ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে গরু পালনই ছেড়ে দিচ্ছেন। খালিশা বল্লভদী গ্রামের কোবাদ মোল্লা বলেন, আমার দুটি গরু চুরি হওয়ার পর থেকে গরু পালা বাদ দিয়েছি। এত কষ্ট করে গরু বড় করার পর যখন চোরে নিয়ে যায়, সেই কষ্টের কোনো সীমা থাকে না।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এলাকায় পুলিশের টহল কমে যাওয়ায় চোরেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। চণ্ডীবরদী গ্রামের শাজাহান শরিফ বলেন, আমাদের এলাকাটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে হওয়ায় পিকআপ ভ্যানে করে গরু চুরি করে পালিয়ে যাওয়া চোরদের জন্য খুব সহজ। এরা কোনো ছিঁচকে চোর নয়, বরং সংঘবদ্ধ বড় কোনো চক্র।
উত্তর চণ্ডীবরদী গ্রামের মুদি দোকানদার মহিনুর শিকদার বলেন, একজন কৃষক তার গরুকে সন্তানের মতো লালন-পালন করেন। গরু চুরি হলে সেই শোক সন্তান হারানোর মতোই। চুরি রোধে পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের আরও সতর্ক হতে হবে।তিনি চুরি প্রতিরোধে চণ্ডীবরদী স্ট্যান্ড, চরবল্লভদী মোড় ও বাউশখালির মতো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কঠোর পাহারার ব্যবস্থা করার দাবি জানান। একইসাথে মহাসড়কে ওঠার প্রধান পথ চণ্ডীবরদীতে একটি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানান তিনি, যা চোর শনাক্ত করতে সহায়ক হবে।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমানের বলেন, গতকাল রাতের গরু চুরির ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে কোনো অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিছুদিন আগে মিলন চৌকিদারের গরু চুরির ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে এবং সর্বক্ষণই তৎপর রয়েছে। ইনশাআল্লাহ, আমরা খুব শীঘ্রই চোর শনাক্ত করতে পারব।