Staff Correspondent:
দেশজুড়ে বাড়ছে জ্বর, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। বর্ষার শুরুতেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ২৭১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায়ই ভর্তি হয়েছেন ৩১৭ জন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি তরুণ দীপক খানের উদাহরণ যেন পরিস্থিতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। ভৈরবে স্থানীয় হাসপাতালে তিনদিন চিকিৎসা নিয়েও জ্বর না কমায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢামেকে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। বর্তমানে মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন দীপকের মা রানু বেগম জানান, “ওষুধ খাওয়ানোর পরও ভালো না হওয়ায় ঢাকায় নিয়ে আসি। এখানে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়ে।”
ঢামেক হাসপাতালের চতুর্থ তলার মেডিসিন বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডে গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানে ১৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে চারজন নতুনভাবে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসক ও নার্সদের মতে, প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, প্রতিদিন ২০০-৩০০ জন রোগী ডেঙ্গু টেস্ট করাচ্ছেন। যদিও ভর্তি প্রয়োজন না হলে রোগীদের ঔষধ ও নির্দেশনা দিয়ে বাসায় পাঠানো হচ্ছে, তবে গুরুতর হলে সঙ্গে সঙ্গেই ভর্তি নেওয়া হচ্ছে।
সীমিত সামর্থ্যে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে
ল্যাবরেটরি বিভাগে এখন প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জনের রক্ত পরীক্ষা হচ্ছে, যেখানে দুই মাস আগেও এ সংখ্যা ছিল মাত্র ১০-১২ জন। রক্ত পরীক্ষার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে বহু জ্বরাক্রান্ত রোগী ও তাদের স্বজনদের।
উপকূলীয় বরগুনায় সর্বোচ্চ সংক্রমণ
সারা দেশের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে বরগুনা জেলায়। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১০২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যার মধ্যে শুধুমাত্র বরগুনা সদরেই ৭৬ জন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ও উপজেলায় বর্তমানে ২২৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাজকিয়া সিদ্দিকাহ জানান, “রোগীর চাপ দিন দিন বাড়ছে। সীমিত জনবল ও অবকাঠামোয় আমরা চেষ্টা করছি, তবে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠছে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে সতর্ক হতে হবে এখনই
রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে বরিশাল বিভাগে—১২৭ জন। এছাড়া ঢাকার দুই সিটিতে ৪৮ জন, চট্টগ্রামে ৭০ জন, ঢাকা বিভাগে ৫২ জন এবং অন্যান্য বিভাগেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রোগী পাওয়া গেছে।
চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। গত বছর মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জনের।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে কীটতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, “পরিস্থিতি জ্যামিতিক হারে খারাপ হবে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরেই প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নেবে। বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী অঞ্চলে পরিস্থিতি সবচেয়ে সংকটজনক হবে। এখনই সচেতন না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।”
তিনি পরামর্শ দেন, “বাসাবাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানি ফেলে দেওয়া এবং পৌর এলাকায় আইজিআর ট্যাবলেট ব্যবহার করা এখন অত্যন্ত জরুরি।”