জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নিয়ে ছয়টি সংস্কার কমিশনে কার্যকরভাবে উপস্থিত থাকার কথা জানিয়েছে বিএনপি। গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রোববার (৬ জুলাই) আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও নজরুল ইসলাম খান।
ঐকমত্য নিয়ে দ্বৈত অনুভূতি: প্রত্যাশা ও উৎকণ্ঠা
মির্জা ফখরুল বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে যেমন আশাবাদ রয়েছে, তেমনি কিছু সিদ্ধান্ত ও নতুন বিতর্কিত প্রস্তাব জনমনে হতাশা এবং উৎকণ্ঠা তৈরি করছে।” তিনি অভিযোগ করেন, কমিশনের সুপারিশ উপস্থাপনের পর হঠাৎ করে বিপরীতমুখী প্রস্তাব উত্থাপন কার্যক্রমে বিলম্ব ঘটাচ্ছে।
বিএনপির অংশগ্রহণ ও সম্মতি: কিছু পরিসংখ্যান
- দুদক সংস্কার: ৪৭টির মধ্যে ৪৬টিতে সম্মতি।
- জনপ্রশাসন সংস্কার: ২০৮টির মধ্যে ১৮৭টিতে একমত, ৫টিতে আংশিক, ১১টিতে ভিন্নমত।
- বিচার বিভাগ: ৮৯টির মধ্যে ৬২টিতে একমত, ৯টি আংশিক, ১৮টি ভিন্নমত।
- নির্বাচনি ব্যবস্থা: ২৪৩টির মধ্যে ১৪১টিতে একমত, ১৪টি আংশিক, ২৪টিতে ভিন্নমত।
- সংবিধান সংস্কার: ‘৭০ অনুচ্ছেদ’ ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণে বিএনপি ছাড় দিয়েছে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা (আর্টিকেল ৪৯) পরিবর্তনে একমত হয়েছে।
‘সরকার দুর্বল হলে রাষ্ট্র অকার্যকর হবে’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “নির্বাচিত সরকার ও সংসদকে ক্ষমতাহীন করলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে পড়ে। একদলীয় আধিপত্য বা অতিরিক্ত ক্ষমতাসীন ব্যক্তি-কেন্দ্রিক ব্যবস্থাও বিপজ্জনক।”
তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখছি এবং জনমতের প্রতিনিধিত্ব করে যুক্তিগ্রাহ্য প্রস্তাব তুলে ধরছি।”
সংসদে বিরোধী দলের ক্ষমতা প্রসঙ্গে বিএনপির অবস্থান
বিএনপি জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দলকে দেওয়া, সংসদীয় কার্যক্রমে যুক্তিসঙ্গত ক্ষমতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পক্ষে মত দিয়েছে। তারা বিভাগীয় হাইকোর্ট বেঞ্চ, জাতীয় সংসদের নির্বাচনী সীমানা পুনর্বিন্যাস এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তনের সুপারিশেও সম্মত হয়েছে।
‘আমরা যেন এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারি’
সংবাদ সম্মেলনের শেষাংশে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা যেন দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে হাজারো শহীদের রক্তে অর্জিত পরিবর্তনের এই সুযোগকে গঠনমূলকভাবে কাজে লাগাই এবং একটি বৈষম্যহীন, মানবিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারি।”