জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ‘ড্রাফট টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি ২০২৫’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন, একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা এভাবে একতরফাভাবে ও তড়িঘড়ি করে প্রণয়ন করা সমীচীন নয়।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, এই খসড়া নীতিমালার উদ্দেশ্য যদিও ইতিবাচক—যেমন লাইসেন্সিং পদ্ধতি সহজ করা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি উৎসাহ দেওয়া এবং গ্রামীণ জনগণের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো—তবুও এতে একাধিক গুরুতর সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে, এই খসড়া বড় মোবাইল অপারেটরদের পক্ষে পক্ষপাতমূলক ধারা সংযোজন করে ছোট প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় আইএসপি ও এসএমইদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
বিএনপির ভাষ্যমতে, খসড়া নীতিমালার অন্যতম সমস্যা হলো—বাজারে একচেটিয়া আধিপত্যের ঝুঁকি। একাধিক সেবা খাতে মালিকানা রাখার নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলে বড় মোবাইল কোম্পানিগুলো পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, ফলে প্রতিযোগিতা কমে যাবে এবং ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারবে না। এছাড়াও, ‘ডি-রেগুলেশন’-এর ফলে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এসএমইগুলো আরও অনিশ্চয়তায় পড়বে, কারণ খসড়ায় তাদের সম্পদ ও দায় নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই।
নীতিমালায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মালিকানার সময়সীমা সংক্রান্ত অস্পষ্টতা এবং ক্রস-ওনারশিপ, এন্টারপ্রাইজ সার্ভিস, নতুন প্রযুক্তি ইত্যাদি নিয়ে যথাযথ দিকনির্দেশনার অভাবও উল্লেখ করেছে বিএনপি। এতে করে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট দেখা দিতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে টেলিকম খাতের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হতে পারে।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হচ্ছে, বড় মোবাইল অপারেটরদের প্রতি নীতিমালায় যে সুবিধাজনক অবস্থান রাখা হয়েছে তা। একক লাইসেন্সের বাধ্যবাধকতা, স্পেকট্রামের ওপর নির্ভরতা এবং ফিক্সড টেলিকম সেবায় দেশজুড়ে কাভারেজের শর্ত ছোট কোম্পানিগুলোর জন্য রীতিমতো বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। বড় কোম্পানিগুলো যদি এন্টারপ্রাইজ ব্রডব্যান্ড বাজারেও প্রবেশ করে, তাহলে প্রতিযোগিতা আরও কমে যাবে এবং একচেটিয়া পরিবেশ সৃষ্টি হবে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে।
বিএনপি মনে করে, খসড়া নীতিমালায় লাইসেন্স ফি, শর্তাবলি ও বাস্তবায়নের বিস্তারিত না থাকায় স্বচ্ছতার ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ কারণে তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, SME, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, গ্রাহক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে যুক্ত করে একটি অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই নীতিমালাকে চূড়ান্ত করা হোক।
বিএনপি বলছে, এই খসড়া নীতিমালার সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিশেষভাবে মূল্যায়ন জরুরি—বিশেষ করে স্থানীয় ব্যবসায়ী, এসএমই খাত ও কর্মসংস্থানের উপর সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনায় নেওয়া দরকার। সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় এ সময়ে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা প্রণয়নে স্বচ্ছতা, সতর্কতা ও গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা আবশ্যক।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়—যে নীতি সবার জন্য সমান সুফল বয়ে আনে, তার পক্ষেই তারা। ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার লক্ষ্যে তারা সমতাভিত্তিক উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যেতে চায়।