A A A Abir Akash, Lakshmipur:
বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর একসময় খাল-বিল, নদী ও জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত ছিল। এসব প্রাকৃতিক সম্পদ ছিল কৃষি, মৎস্য, পরিবেশ ও জনজীবনের অমূল্য সহায়ক। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে এই জলাশয়গুলো একের পর এক দখলদারদের কবলে পড়ে। বাঁধ দিয়ে পানি আটকিয়ে মাছ চাষ, খালপথে বাঁধ নির্মাণ, জলাশয় ভরাটসহ নানা অনিয়মে লক্ষ্মীপুরে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা।
বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় ফসলি জমি তলিয়ে যায়, ঘরবাড়ি পানিতে ভাসে, রাস্তাঘাট অচল হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থী, দিনমজুরসহ সাধারণ মানুষ পড়ে চরম দুর্ভোগে। পানির ওপর স্থায়ীভাবে দাঁড়িয়ে থাকা জমিতে মশার উপদ্রব বেড়ে গিয়ে বাড়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগ।
এই সংকট ঘিরে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়লেও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকা দখলদারদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।
চিত্র বদলে দেন জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার
জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই রাজীব কুমার সরকার স্থানীয় সমস্যাগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। সরেজমিনে পরিদর্শন করে তিনি দেখেন, সমস্যার মূল হলো খাল ও জলাশয়ের দখল।
তিনি ভূমি অফিস, মৎস্য বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে শুরু করেন এক সুপরিকল্পিত দখলমুক্ত অভিযান। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রভাবশালীদের চাপ, হুমকি ও আইনি জটিলতা সত্ত্বেও তিনি নতিস্বীকার না করে কঠোর হাতে অভিযান চালিয়ে যান।
ফলাফল: খাল ফিরেছে প্রাণে, মানুষ ফিরেছে স্বস্তিতে
অভিযানে অসংখ্য অবৈধ বাঁধ অপসারণ করে খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হয়। বহু জলাশয়, বিল ও খাল পুনরুদ্ধার করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে জরিমানা ও মামলাও করা হয়।
এর ফলে জলাবদ্ধতা কমেছে, কৃষিজমি চাষাবাদের উপযোগী হয়েছে, পানির প্রবাহ স্বাভাবিক হওয়ায় বৃষ্টি হলেই এখন আর ঘরবাড়ি বা স্কুল তলিয়ে যায় না। মানুষ স্বাভাবিক যাতায়াত করতে পারছে, শিশুরা যেতে পারছে স্কুলে, কৃষক চাষাবাদে মন দিতে পারছেন, শ্রমজীবীরা নির্বিঘ্নে কাজে যেতে পারছেন।
প্রশংসায় ভাসছেন রাজীব কুমার সরকার
জেলা জুড়ে রাজীব কুমার সরকারের সাহসী পদক্ষেপে চলছে প্রশংসার ঝড়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদপত্র ও স্থানীয় জনতার মুখে মুখে এখন একটাই নাম—রাজীব কুমার সরকার।
অনেকেই বলছেন, একজন প্রশাসকের সদিচ্ছা, সাহস এবং জনকল্যাণমূলক সিদ্ধান্ত থাকলে যে বড় সংকটও সমাধান সম্ভব—এটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
অনুপ্রেরণা হতে পারে সারা দেশের জন্য
লক্ষ্মীপুরের এই অভিযান এখন দেশের অন্যান্য জেলার প্রশাসনকেও অনুপ্রাণিত করছে। কারণ জলাশয় দখল, খাল ভরাট ও জলাবদ্ধতা বাংলাদেশের বহু জেলায় বিদ্যমান। তাই রাজীব কুমার সরকারের এ উদ্যোগ হতে পারে জাতীয় পর্যায়ের নীতিমালার অংশ।
Last words
প্রশাসন যখন জনস্বার্থে কাজ করে, তখন জনগণ তাকে হৃদয়ে স্থান দেয়। লক্ষ্মীপুরের খাল-বিল দখলমুক্ত করে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনার যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা মানুষের জীবনধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। এই উদ্যোগ একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে, তেমনি আগামী প্রজন্মের জন্য নির্মাণ করবে টেকসই ও সচেতন প্রশাসনিক নজির।
এটি নিঃসন্দেহে স্থানীয় প্রশাসনের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায় হয়ে থাকবে।