নওগাঁ প্রতিনিধি: মো. হাবিবুর রহমান:
নওগাঁয় প্রতিনিয়ত বাড়ছে উচ্চমাত্রার শব্দ দূষণ। আইন থাকলেও তার বাস্তব প্রয়োগ নেই বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। শহরের ব্যস্ত সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, সাইলেন্সার ছাড়া মোটরসাইকেল ও যত্রতত্র মাইক ব্যবহারের ফলে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।
২০০৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা’ অনুযায়ী, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের এই দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে এর কার্যকারিতা চোখে পড়ছে না।
স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কায় চিকিৎসকরা
নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক (ইএনটি) ডা. মিলন কুমার চৌধুরী জানান,
“৬০ ডেসিবলের নিচে শব্দমাত্রা স্বাভাবিক ধরা হয়। কিন্তু বর্তমানে শহরের বিভিন্ন স্থানে ৮০-৯০ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দ রেকর্ড হচ্ছে, যা মারাত্মকভাবে কানের অভ্যন্তরীণ নার্ভকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটি আর ফিরে আসে না।”
He also said,
“শব্দদূষণের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়তে পারে। শিশুরাও এতে ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ তাদের শ্রবণেন্দ্রিয় খুব স্পর্শকাতর।”
শহরবাসীর ভোগান্তি চরমে
ফয়েজ উদ্দিন কলেজের ইংরেজি শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন,
“শব্দদূষণ এখন নিরব ঘাতকে পরিণত হয়েছে। সুস্থ জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”
স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী কায়েস উদ্দিন বলেন,
“আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই, এটাই বড় সমস্যা। মাইকিং, সাউন্ডবক্স ও হর্ণ ব্যবহারে লাগাম টানতে হবে।”
নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন অভিভাবক জানান, স্কুল চলাকালীন সময়ে বাইরের প্রচণ্ড শব্দে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না।
শব্দদূষণ বিধিমালার বাস্তবতা
২০০৬ সালের বিধিমালায় বলা হয়েছে—
- নিরব এলাকায় দিনে ৫০, রাতে ৪০ ডেসিবল
- আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫, রাতে ৪৫ ডেসিবল
- মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০, রাতে ৫০ ডেসিবল
- বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০, রাতে ৬০ ডেসিবল
- শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫, রাতে ৭০ ডেসিবল
এই বিধি অনুসারে, সুনির্দিষ্ট সময়ে ও নির্দিষ্ট মাত্রায় মাইক/সাউন্ড ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু নওগাঁয় তা মানা হচ্ছে না বলেই শহরবাসীর অভিযোগ।
প্রশাসনের দায় ও করণীয়
নওগাঁ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল হোসাইন জানান,
“২০০৬ সালের গেজেটে জেলা পর্যায়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা স্পষ্ট নয়। তবে আইন অনুযায়ী জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদেরই নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়াল বলেন,
“শব্দদূষণ অবশ্যই একটি বড় সমস্যা। আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”