পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি:
খুলনার পাইকগাছা ও সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সংযোগকারী শালিখা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে চার বছর আগে। কিন্তু আজও সেই কাজ শেষ হয়নি। বরং ৬০ শতাংশ কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস এ-জেডটি (জেভি) কাজ ফেলে হঠাৎ সাইট থেকে গায়েব হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে নদীর ওপর বাঁশের ভাঙাচোরা সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে হাজারো মানুষ।
প্রেক্ষাপট ও জনদুর্ভোগ:
রাড়ুলী ইউনিয়নের কাটিপাড়া-খেশরা গ্রামের পাশে কপোতাক্ষ নদে ১৯৯৮ সালে স্থানীয় চেষ্টায় একটি সাঁকো নির্মিত হয়। কিন্তু ২০১৩ সালে পাখিমারা টিআরএম প্রকল্পের আওতায় নদী খননের সময় সেই রাস্তা ও সাঁকো ভেঙে ফেলা হয়। এরপর থেকে সেতুর অভাবে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে দুই উপজেলার মানুষ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করে। প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৬ মিটার দীর্ঘ এই আরসিসি গার্ডার ব্রিজটির নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২3 সালের ৩১ আগস্ট। কিন্তু গত বছর আগস্ট থেকেই কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। রাতের আঁধারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইট থেকে যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক তৎপরতা:
একাধিকবার নোটিশ দেয়ার পরও সাড়া না পেয়ে গত ২০২৩ সালের ১০ মার্চ খুলনা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে ২৮ দিনের চূড়ান্ত নোটিশ পাঠানো হয়। কাজ বাতিলের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়।
পাইকগাছা উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাফিন শোয়েব বলেন,
“ঠিকাদারকে বারবার তাগাদা দিয়েও কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। চূড়ান্ত নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তারা জানিয়েছে এই সপ্তাহেই আবার কাজে ফিরবে।”
জনদুর্ভোগ চরমে:
ভাঙাচোরা সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন পার হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ যাত্রীরা।
কাটিপাড়া বাজারের বস্ত্র ব্যবসায়ী গোবিন্দ বলেন,
“প্রতিদিন সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় লাগে। কখন যে সাঁকো ভেঙে পড়ে যাই, তার ঠিক নেই।”
কাঁচামাল ব্যবসায়ী তারক চন্দ্র জানান,
“ভ্যান নিয়ে পার হওয়ার সময় সাঁকো দুলে ওঠে। মনে হয় নদীতে পড়ে যাব।”
শিক্ষার্থী আফসানা মিমি, রাসেল সরদারসহ অনেকেই বলেন,
“সাইকেল নিয়ে পার হতে গেলে চাকা পিছলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। বর্ষার সময় ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার দাবি জানাই।”
ঠিকাদার ও ইউএনও’র প্রতিক্রিয়া:
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস এ-জেডটি (জেভি)–এর স্বত্বাধিকারী জিয়াউল আহসান মুঠোফোনে বলেন,
“আগামী সপ্তাহেই আমরা আবার কাজ শুরু করব।”
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহেরা নাজনীন বলেন,
“সেতুটি দুই জেলার গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ। বিষয়টি এলজিইডির নজরে আনা হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশা করছি।”