Staff Correspondent:
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারত পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন ঢাকার চারদিক থেকে আসা বিক্ষুব্ধ জনতার ঢল গিয়ে গণভবনে প্রবেশ করে। দখল নেয় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই সরকারি বাসভবন। গণভবনে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের সময় প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি রাষ্ট্রীয় নথি হারিয়ে যায়, যার বেশিরভাগই ছিল অত্যন্ত গোপন ও স্পর্শকাতর।
পুলিশ জানিয়েছে, গণভবনের দ্বিতীয় তলায় শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কক্ষে সংরক্ষিত একটি ভল্টের পাশের আলমারিতে এসব নথি রাখা ছিল। ভাঙচুরের সময় লুট হওয়া অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে সেগুলোও নিয়ে যায় জনতা। এসব নথির মধ্যে ছিল— করোনা টিকা কেনার টেন্ডার, ওষুধ ক্রয়, বিমান কেনা, এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তসংক্রান্ত গোপন দলিল।
চিহ্নিত হয়নি লুটকারীরা, জিডি করেছে পুলিশ
শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম আজম জানান, গণভবনে লুট ও অস্ত্র খোয়া যাওয়ার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে খোয়া যাওয়া নথি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণভবনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, শেখ হাসিনা ছুটির দিনেও সচিবালয়ে না গিয়ে গণভবন থেকেই রাষ্ট্রীয় ফাইলে স্বাক্ষর করতেন। তাই গুরুত্বপূর্ণ নথি গণভবনেই রাখতেন।
নথি চুরির পেছনে উদ্দেশ্যমূলক পরিকল্পনার আশঙ্কা
পুলিশ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, শুধু কাগজপত্র লুট করা এবং বিক্রয়যোগ্য জিনিস না নেওয়াটা একটি চক্রের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়। কারণ, এসব নথির আর্থিক মূল্য না থাকলেও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনৈতিক কৌশল ও কূটনীতিক সম্পর্ক—সবকিছুই এতে স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ থাকে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নথি যদি অন্য রাষ্ট্র বা স্বার্থান্বেষী মহলের হাতে পড়ে, তাহলে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে। এমনকি রাষ্ট্রের কূটনৈতিক অবস্থান, কৌশলগত পরিকল্পনা এবং জনগণের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, “রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল হারিয়ে গেলে জাতীয় নিরাপত্তার বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়। এসব নথি শত্রু রাষ্ট্র বা চক্রান্তকারী গোষ্ঠীর হাতে গেলে তারা রাষ্ট্রের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত দ্রুত এসব ফাইল উদ্ধার করা।”
Conclusion
লুট হওয়া নথিগুলো শুধুই প্রশাসনিক দলিল নয়, বরং তা রাষ্ট্র পরিচালনার রূপরেখা। তাই দ্রুত এগুলো উদ্ধার না হলে দেশ এক ভয়াবহ নিরাপত্তাজনিত জটিলতার মুখোমুখি হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে—এমনটাই মত বিশ্লেষকদের।