সমাপ্তী খান, মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি:
আজ, ২৮ জুন, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিন। মাইক্রোক্রেডিট ও সামাজিক ব্যবসা মডেলের প্রবক্তা হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
১৯৪০ সালের ২৮ জুন তৎকালীন পূর্ববঙ্গের চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ড. ইউনূস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সমাপ্তির পর ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেন ১৯৭১ সালে। পরবর্তীতে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ও যুক্তরাষ্ট্রের মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন।
১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ ড. ইউনূসকে ক্ষুদ্র ঋণের ধারণা উদ্ভাবনে অনুপ্রাণিত করে। সে সময় মাত্র ২৭ ডলার ব্যক্তিগতভাবে ঋণ দেন কিছু দরিদ্র নারীকে। এই উদ্যোগ পরবর্তীতে রূপ নেয় ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে—যা ১৯৮৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। জামানতবিহীন ক্ষুদ্র ঋণের এই মডেল বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয় এবং নিন্ম আয়ের মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পথ সুগম করে।
২০০৬ সালে ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। একইসঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম, কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল, অলিম্পিক লরেলসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মাননা লাভ করেন। তার নামে ৭০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করেছে।
তবে তার দীর্ঘ কর্মজীবনে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। ২০১০-এর দশকে সরকার ও তার মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়, যার ফলে তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং একাধিক মামলার সম্মুখীন হতে হয়। এসব অভিযোগ বরাবরই তিনি অস্বীকার করে আসছেন। চলতি বছরের শুরুতে গ্রামীণ টেলিকম সংশ্লিষ্ট একটি মামলায় জামিনে মুক্তি পান তিনি।
২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট ও ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূসকে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত করা হয়। তার নেতৃত্বে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ তৈরির উদ্যোগ চলছে। একইসঙ্গে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ, COP29, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
৮৫তম জন্মদিন উপলক্ষে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে ড. ইউনূসের জীবন ও কর্মকে স্মরণ করা হচ্ছে।